ছোটবেলার কথা কি মনে আছে? খাওয়ার সময় পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যের পাতে তুলে দেয়া হতো মাছের মাথা। মা-বাবার ধারণা ছিল, মাথা খেলে বাড়বে সন্তানের বুদ্ধি। অনেক পরিবারে কে মাছের মাথা খাবে এ নিয়ে ছোটদের মধ্যে ঝগড়াও বিচিত্র ছিল না। দেখা গেল মাছের মাথা একটা, অথচ দাবিদার দুই ভাই! এ নিয়ে হতো মান-অভিমান। এখন প্রশ্ন হলো- আসলেই কি মাছের মাথা খেলে বুদ্ধি বাড়ে?
এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার সুমি।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। গরম ভাতের সাথে মাছের ঝোল অনেকেরই প্রিয় খাবার। আর মাছ থাকলে মাছের মাথা পরিবারের কারো না কারো পাতে উঠবেই। কিন্তু একটা বয়সের পর অনেকেই মাছের মাথা খেতে ভয় পান। মনে করেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর চর্বি রয়েছে মাছের মাথায় যা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে মাছের মাথা মাছের অন্যান্য অংশের মতোই উচ্চ মূল্যের পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ। প্রথম শ্রেণির আমিষ এবং স্বাস্থ্যসম্মত চর্বি এবং স্ট্রং এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন্স এবং মিনারেলস রয়েছে মাছের মাথায়। এর চেয়ে অন্যান্য রেড মিট বরং অনেক ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের জন্য।
জাহানারা আক্তার সুমি বলেন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ডি, এইচ, এ এগুলো হলো হেলদি ফ্যাট যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব উপকারী। সেইসঙ্গে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এগুলো সাহায্য করে। আমাদের শরীর যেহেতু ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড তৈরি করতে পারে না, তাই আমাদের প্রতিদিন উল্লিখিত উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত, যা মাছের মাথায় যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এই উপাদানগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। ডিপ্রেশন, স্ট্রেস ইত্যাদি দূর করতেও এগুলো সাহায্য করে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস এবং আর্থারাইটিসের ক্ষেত্রেও উপকারী ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন-এ একটি স্ট্রং এন্টি অক্সিডেন্ট যা মাছের মাথায় যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এই ভিটামিন আমাদের দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের বিকাশেও ভিটামিন-এ দারুণ কার্যকর। এ কারণে নিশ্চিন্তে মাছের মাথা খাওয়া যেতেই পারে।