মাথাব্যথা মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা। আর আমাদের চারপাশে মাথাব্যথায় ভোগা মানুষের সংখ্যা অধিক। মাথাব্যথা মূলত প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি- এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রাথমিক মাথাব্যথা হলো সেগুলো, যা অন্য কোনো রোগের কারণে হয় না। প্রাথমিক মাথাব্যথার মধ্যে আছে মাইগ্রেন, টেনশন মাথাব্যথা বা টেনশন হেডেক, ট্রাইজিমিনাল অটোমেটিক সেফালালগিয়াস অন্যতম।
মাইগ্রেন অ্যাটাক হলে সাধারণত ৪ থেকে ৭১ ঘণ্টা ধরে মাথায় ব্যথা হতে থাকে। এ ব্যথার অনুভব অনেকটা ছুরিকাঘাতের মতো। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে আছে বমি বমি ভাব। এ ব্যথার সঙ্গে আলো ও শব্দের সংবেদনশীলতার সম্পর্ক আছে। কাজেই মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে কম আলোময় ও শব্দহীন জায়গায় থাকতে পারলে আরাম পাওয়া যায়।
গবেষকেরা মনে করেন, মাইগ্রেন অ্যাটাকের কারণ হলো মস্তিষ্কে রাসায়নিকের ভারসাম্যহীনতা। আবার জেনেটিক বা বংশগত কারণেও মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া আরও যে কারণগুলোর জন্য মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
স্ট্রেসের কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে
অ্যাংজাইটি
নারীদের হরমোনের পরিবর্তন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা বেশি ঘুম হওয়া
হঠাৎ আবহাওয়া ও পরিবেশগত পরিবর্তন হওয়া
প্রকট সুগন্ধি
অতিরিক্ত আলো অথবা ফ্ল্যাশ লাইট
অতিরিক্ত চা ও কফি
ধূমপান
সময়মতো খাবার না খাওয়া
প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া।
সাধারণ পরামর্শ
আমাদের জীবনযাপনের কিছুটা পরিবর্তন আনলে মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রাথমিকভাবে যা করতে হবে
কখনো সকালের নাশতা অবহেলা করা যাবে না
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যাবে না।
প্রতিবেলা সুষম খাবার খেতে হবে।
প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে।
কাঠবাদাম, কাঠবাদামের দুধ, পার্সলিপাতা, মৌরি, রসুন, আদা ও তাজা আনারস খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
অ্যামাইনো অ্যাসিড টাইরামিনযুক্ত খাবারগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে- প্রসেস করা মাংস, মাখন, হার্ড চিজ, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার, এভোকাডো, কলা, বাঁধাকপি, বেগুন, আলু, টমেটো, রাসবেরি, চকলেট, রেড প্লাম, ইস্ট, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়। প্রতিদিন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, রিবোফ্লোবিন (ভিটামিন বি২), নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩), ভিটামিন বি৫ ও ভিটামিন বি৬ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার, ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার এবং অ্যাসিডিটি তৈরি হয়, সে রকম খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, ধারণা করা হয় যে অ্যাসিডিটির সঙ্গে মাইগ্রেনের ব্যথার সম্পর্ক আছে।
যে খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার:
দুধ, দই, বিনস, ব্রকলি, তিসি, তিল, কমলালেবু, পেঁপে, পোস্তদানা, ব্রাজিল নাটস, সিলারি, টফু, পালং শাক, ঢ্যাঁড়স, কাঁটাসহ সব ধরনের ছোট মাছ, রুই, বাটা, ফলি, কাতলা, শিং, কাঁকড়া, মাগুর, সরপুঁটি, বোয়াল, কই ও মৃগেল মাছ।
ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার:
গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বিনস, ব্রকলি, নাটস, হোল গ্রেইন, তিসি, তিল, কলা, সি ফুড, চিনাবাদাম, ওয়েস্টার, ঢেঁকিছাঁটা চাল, ভুট্টা, চিড়া, আটা, মুগডাল, মাষকলাইয়ের ডাল, ছোলার ডাল, পেঁয়াজকলি, মুলা, গুঁড়া দুধ, বরবটি, পানপাতা, কাজুবাদাম, নারকেল, পাকা আম, জিরা, আদা, চা, কফি, কোকো।
ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ খাবার:
দুধ, টুনা মাছ, ব্রকলি, কাঠবাদাম, ডিম, মাশরুম, সব ধরনের শাক, সব ধরনের ডাল, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, কলিজা ইত্যাদি।
ভিটামিন বি৩ সমৃদ্ধ খাবার:
চীনবাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম, তিল, সূর্যমুখীর বীজ, ডাবলি বুট, সবুজ মুগডাল, আপেল, খেজুর, আম, ডুমুর, কলা, ডিম, টুনা মাছ,মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাশরুম, মিষ্টি আলু, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।
ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার:
দুধ, টুনা মাছ, স্যামন মাছ, ডিম, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মুরগির কলিজা, গাজর, পালং শাক, শজনেপাতা, রসুন, সূর্যমুখী বীজ, মটরশুঁটি ইত্যাদি।