ইঁদুর দৌড়ের জীবনে একাকিত্ব হল অন্যতম সঙ্গী। সারাদিন পাহাড়প্রমাণ কাজের ভিড়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও দিনের শেষে একাকিত্ব গ্রাস করে অনেককেই। কেউ স্বেচ্ছায় একা, কেউ বাধ্য হয়ে। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একাকিত্ব। একা থাকার এই অবসাদ যে শুধু মনের ওপর চাপ তৈরি করে তা নয়, শরীরের ওপরেও প্রভাব ফেলে। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি করতে পারে একাকিত্ব।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ ‘আওয়ার এপিডেমিক অব লোনলিনেস ও আইসোলেশন’ নামে এক প্রতিবেদনে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে বিশ্বে একাকিত্ব যেন জেঁকে বসেছে। মহামারির সময় লকডাউন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে নিভৃতবাস, সামাজিক দূরত্ববিধি— সব মিলিয়ে একা থাকাটা যেন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। তারপর কোভিড চলে গেছে। কিন্তু রয়ে গেছে একাকিত্ব। আর একা থাকার এই অবসাদ থেকেই বাড়ছে হৃদরোগ, ডিমেনশিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতার মতো রোগের ঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল ডা. বিবেক মূর্তি জানিয়েছেন, একাকিত্বে ভোগা দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর। স্থূলতা এবং শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা লোকদের জন্য এর স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেশি।
আফ্রিকান ইউনিয়নের যুব প্রতিনিধি চিডো এমপেম্বা বলেন, একাকিত্ব আজ সীমানা পেরিয়ে এবং স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও উন্নয়নের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কথায়, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কোনো বয়স বা সীমানা মানে না।
গবেষণা বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে একাকিত্বে ভুগলে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং করোনারি ধমনী রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এটি তরুণদের জীবনকেও বিপর্যস্ত করতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীই একাকিত্বের অবসাদে ভোগে। বাস্তবে এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, যত দিন যাবে, এই সমস্যা ধীরে ধীরে আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। তাই এই সংকট মোকাবিলায় একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করেছে ডব্লিউএইচও। এই কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন ডা. বিবেক মূর্তি ও চিডো এমপেম্বা।
তারা বলেছেন, এখন থেকেই একাকিত্বের রাশ টেনে ধরা জরুরি। অবসাদকে কিছুতেই মনের ওপর চেপে বসতে দেওয়া যাবে না।
কাজের চাপ, ব্যক্তিগত জটিলতা এবং অন্যের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যান অনেকেই। একাকিত্বের জন্ম নেয় সেখান থেকেই। তাই সঙ্গীহীন জীবনেও নিজেকে ভালো রাখার রাস্তা খুঁজে নিতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক মেলামেশাও বাড়াতে হবে বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।