আসছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের নতুন দিনটি বরণ করে নেওয়ার জন্য বাঙালির ঘরে ঘরে থাকে বৈশাখী আয়োজন। এবার ঈদুল ফিতরের দুইদিন পরেই পহেলা বৈশাখ। যার কারণে অনেকেই এবার পরিবারের সঙ্গে অনেক বছর পর বৈশাখ উদযাবন করার সুযোগ পাবে। দুইটা উৎসব কাছাকাছি হওয়াতে আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশিই বলা যায়। পরিবারের সঙ্গে যেহেতু এবারের বৈশাখ তাই এবারের উৎসবের আনন্দে ঘরেই তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে বৈশাখী আমেজ।
ঘরেই পয়লা বৈশাখের আমেজ তৈরি করবেন যেভাবে:
ভোজন আয়োজন-
বৈশাখ মানেই পান্তা-ইলিশ। তবে ইলিশ খিচুড়িও বৈশাখের ভোজন আয়োজনে যোগ করতে পারে ভিন্ন মাত্রা। তবে পান্তা ভাত হলো বাঙালির জনপ্রিয় খাবার। বাংলাদেশে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে পান্তা উৎসবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু ও পরিব্যাপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া চলমান গরমের মোকাবিলা করতে বা শরীরকে চাঙা রাখতে পান্তা ভাতের জুড়ি মেলা ভার। তাই জেনে নিন পান্তা ভাতের রকমারি রেসিপি।
১. টক ঝাল পান্তা ভাত
উপকরণ: বাসি ভাত- ১ বাটি, আলু- ১টা, ছোট পেঁয়াজ- ১টা, কাঁচামরিচ ২টা, লবণ- ১ চামচ, সরিষার তেল- ৬ চামচ, গন্ধরাজ লেবু- ১ টুকরো, তেঁতুল-আধা চা চামচ।
প্রণালী: প্রথমে আলু খোসা ছাড়িয়ে সরু সরু করে কেটে ধুয়ে লবণ মাখিয়ে রাখুন। এরপরে একটা ননস্টিক প্যানে ৪ চামচ সরিষার তেল দিয়ে গরম করে আলুর টুকরোগুলো দিয়ে ভেজে তুলে নিন। এরপর পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ কুচি কুচি করে কেটে রাখুন। এবারে বাসি ভাতটা একটা বাটিতে নিয়ে পানি মিশিয়ে একটু পানি রেখে বাকি পানিটা ফেলে দিন। এবারে পানি ভেজানো ভাতের মধ্যে বাকি ২ চামচ সরিষার তেল, কাঁচামরিচ কুচি, পেঁয়াজ কুচি, লবণ ও গন্ধরাজ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবারে আলু ভাজার থেকে কিছুটা রেখে দিয়ে সবটা ভাতের সাথে মিশিয়ে নিন। এবারে ভাতের ওপরে বাকি আলু ভাজাগুলো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
২. ডাল পোড়ার ভর্তা দিয়ে পান্তা
উপকরণ: মুসুর ডাল- ১/২ কাপ, পেঁয়াজ- ১টি বড়, শুকনো মরিচ- ২টি, কাঁচামরিচ- ২টি, লবণ- স্বাদমতো, হলুদ- ১/২ চা চামচ, সরিষার তেল- ৩ টেবিল চামচ।
প্রণালী: মশুর ডাল ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন আধ ঘণ্টা। কড়াই গরম করে এক চামচ তেল দিন। পানি ঝরিয়ে মশুর ডাল দিয়ে নাড়াচাড়া করুন যতক্ষণ না ডালের রং বদলে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এতে দেড় কাপ পানি আর হলুদ দিন। আধা সেদ্ধ হলে ভালো করে কাঁটা দিয়ে ঘেঁটে দেবেন। সম্পূর্ণ সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাঝারি আঁচে রান্না করুন। দরকারে আরও গরম পানি দিতে পারেন। এবার অন্য কড়ায় শুকনো মরিচ পেয়াঁজ হালকা করে ভেজে নিন। ডাল মাখার মতো শুকনো হলে পেয়াঁজ, শুকনো মরিচ, কাঁচা মরিচ, লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে পান্তা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। এক্ষেত্রে বাসি ভাতে পানি ঢেলে অন্তত ১২ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন।
৩. চিংড়ি মাছ-মলা দিয়ে পান্তা ভাত
উপকরণ: মাঝারি মাপের নদীর বা পুকুরের চিংড়ি মাছ- ২৫০ গ্রাম (ভাল করে পা, খোসা, পিঠের নোংরা ফেলে ধুয়ে নিন), পেঁয়াজ- ১টি বড়, কাঁচামরিচ- ৩টি, লবণ- স্বাদমতো, হলুদ- ১/২ চা চামচ, সরিষার তেল- ২ টেবিল চামচ।
প্রণালী: মাছে লবণ হলুদ মাখিয়ে রাখুন অন্তত ১৫ মিনিট। এই ফাঁকে পেয়াঁজ আর মরিচ কুচিয়ে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে মাছ দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ভাজুন পানি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত। তুলে একটু ঠান্ডা করুন। এবার এতে পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ সামান্য লবণ দিয়ে ভালো করে মাখুন। মাছ যাতে একেবারে মিশে যায়। এবার ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা বাসিভাত বের করে তার সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন। যেমন স্বাদ, তেমন গরম থেকেও রেহাই পাবেন।
ভর্তার নানা আয়োজন-
১. ডাল ভর্তা: ১ কাপ ডাল, ৫-৬টি কাঁচামরিচ, ৩-৪ কোঁয়া রসুন দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। এবার পরিমাণ মতো সরিষার তেল ও লবণ দিয়ে মেখে নিন ৷
২. কচু ভর্তা: মোটা কচুর সবুজ অংশ কেটে লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। কড়াইতে ২ টেবিল-চামচ সরিষার তেল গরম করে সিদ্ধ কচু দিয়ে, আধা চা-চামচ কালজিরার ফোঁড়ন, ১ টেবিল-চামচ রসুন কুচি ১ টেবিল-চামচ পেঁয়াজ কুচি ৪-৫টি কাঁচা-মরিচ ফালির সঙ্গে সামান্য লবণ দিয়ে হলুদ, মরিচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া ছিটিয়ে নেড়েচেড়ে ভর্তা করে নিন।
৩. মরিচ ভর্তা: ৮-১০টি শুকনা মরিচ ভেজে নিন। ২টি পেঁয়াজ কুচি করে নিন। ১ টেবিল-চামচ সরিষার তেল দিয়ে, স্বাদমতো লবণসহ একসাথে মেখে নিন।
শরবত-
পোড়া আমের শরবত: কাঁচা আম ৪টি, পরিমাণমতো চিনি, বিট লবণ, কাঁচা মরিচ, বরফ কুচি, পুদিনা পাতা ও পানি। আমগুলো প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এবার খোসাসহ মাঝারি আঁচে পুড়িয়ে নিন। চুলা থেকে তুলে ঠান্ডা হলে আমের খোসা ছাড়িয়ে নিন। হাতে চটকে আমের ভেতরের নরম ক্লাথ বের করুন। আমের সঙ্গে সব উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। তৈরি আপনার পোড়া আমের শরবত। পছন্দমতো স্বচ্ছ গ্লাসে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
কাঁচা আমের জুস: ২টি আম ফালি করে ২ গ্লাস পানি দিয়ে জ্বাল করে নিন। ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা কুচি ২ টেবিল-চামচ করে, ১টি কাঁচামরিচ কুচি, স্বাদমতো লবণ, চিনি আর অল্প বিট লবণ মিশিয়ে আরও ২ গ্লাস পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে জ্বাল করা আমসহ ব্লেন্ড করে নিন ৷ এবারে একটি প্লেটে গরম ভাতের সাথে সব রকমের ভর্তা ও মাছ দিয়ে পরিবেশন করুন। সাথে পরিবেশন করুন এক গ্লাস কাঁচা আমের জুস।
এ ছাড়াও খাবার টেবিলে গ্রামবাংলার ছোঁয়া আনতে মণ্ডা-মিঠাই, কদমা, বাতাসা মুরলি, নিমকি দিয়ে সার্ভিং ট্রে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যদি স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা চিন্তা করেন কিংবা পরিবারের বয়স্ক কেউ থাকলে দই, চিড়া, খই, মুড়ি আর ফল দিয়েই করতে পারেন ভোজের আয়োজন। আর হাতে সময় থাকলে পিঠাপুলি আর মোয়া আয়োজনে রাখতে পারেন।