একেক রঙের খাবারে একেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে, যা সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। এই গরমের সময় সুস্থ থাকতে রেইনবো ফুডের ব্যবহার যথাযথভাবে করতে হবে। কারণ বিভিন্ন ধরনের রঙের খাবারে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে।
ভিটামিনস ও মিনারেলসের কাজ হলো বিপাকক্রিয়া অংশগ্রহণ করে শরীরের শক্তি উৎপন্ন করা।
এ ছাড়া হাড়, দাঁত, চুল ও চোখের স্বাস্থ্যসহ দেহের অভ্যন্তরীণ তরল পদার্থের সমতা বজায় রেখে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে খনিজ ও ভিটামিনজাতীয় খাদ্য উপাদান প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন রঙের বা রেইনবো কালারের দুই কাপ ফল ও আড়াই কাপ নানা রঙের শাক-সবজি রাখতে হবে। খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, লাল, সবুজ, হলুদ, সাদা, কমলা অর্থাৎ নানা রঙের ছোঁয়া যেন থাকে টেবিলের খাদ্য উপাদানে।
লাল রঙের খাবার
হার্ট ও চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে খেজুর, টমেটো, তরমুজ বীজ, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি লাল রঙের খাবার। এসব খাদ্যে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘এ’, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পর্যাপ্ত আয়রন, ফসফরাস, জিংক ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। ফলে চোখের দৃষ্টি ভালো থাকে ও হার্টের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।
লাল রঙের টমেটোতে ‘লাইকোপেন’ নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। চোখ, হার্ট, ফুসফুসের সুস্থতায় সকালের নাশতা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত লাল রঙের ফল ও সবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা দরকার।
হলুদ রঙের খাবার
ত্বকের সুস্থতায় ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুণ কার্যকর হলুদ রঙের খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। এ ধরনের কিছু খাবার হলো—পাকা কলা, আনারস, পাকা পেঁপে, হলুদ ক্যাপসিকাম, হলুদ রঙের লেবু, মিষ্টি কুমড়া, ডুমুর, ডিমের কুসুম ইত্যাদি। হলুদ ফলমূল ও শাক-সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেলস প্রভৃতি থাকে। এ ছাড়া পাকা কলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস রয়েছে। তাই দৈনিক খাদ্যতালিকা হতে পারে হলুদ রঙের শাক-সবজি ও ফলমূল দিয়ে। এসব ফল ও শাক-সবজি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানসমৃদ্ধ হওয়ায় প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে।
কমলা রঙের খাবার
কমলা রঙের ফল ও শাক-সবজি, যেমন—কমলা, মালটা, গাজর ইত্যাদিতে বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, প্যারোটিন সরে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হয় কমলা রঙের ফল ও শাক-সবজি। এসব খাবার খেলে চোখের পাশাপাশি শ্বসনতন্ত্র সুস্থ থাকে। কমলা রঙের দৈনিক একটি ফল বা সবজি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। তাই এই সময় একটি পাকা আম বা পাকা আমের জুস কিংবা এক গ্লাস মালটার রস অথবা কমলার রস কিংবা গাজর ও শসা মিলে একটি সালাদ করে খেতে পারেন।
সবুজ ও গাঢ় সবুজ রঙের খাবার
লেবু, শসা, সবুজ রঙের পেয়ারা, আপেল, তাজা শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই তীব্র গরমের সময় রোজা রেখে সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন ইফতার থেকে সাহরি অবধি সবুজ রঙের খাদ্য উপাদান খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। যেমন—ইফতারিতে লেবুর শরবত, ছোলা-মুড়ির সঙ্গে শসা, সবুজ আপেল, পেয়ারা রাখলে সারা দিনের ভিটামিন ‘সি’ ও অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণ হয় খুব সহজে। সুস্থ থাকতে চাইলে পরিমিত পরিমাণে ভাতের সঙ্গে মাছ কিংবা মাংসের পাশাপাশি বেশি করে নানা রঙের সবজি ও সবুজ শাকের রেসিপি রাখতে পারেন ।
নীল ও বেগুনি রঙের খাবার
নীল ও বেগুনি রঙের শাক-সবজি ও ফলমূল রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে চান তাঁদের জন্য নীল বেগুনি রঙের ফলমূল ও শাক-সবজি দৈনিক খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে পারেন। নীল বা কালো রঙের আঙুর, ব্লুবেরি, বেগুনি রঙের চায়নিজ ক্যাবেজ, বেগুনি রঙের বেগুনের কোনো রেসিপি দিনের যে সময় খাবারের প্লেটে রাখতে পারেন।
সাদা রঙের খাবার
বিশুদ্ধ সাদা পানি, ডিম, দুধ, সাদা রঙের ফল ও সবজি, যেমন—শসা, নাশপাতি ইত্যাদি। গরমের সময় দেহে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, এতে শরীর পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই শরীরকে যথাযথ হাইড্রেট রাখতে হলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। সাদা রঙের ডিম, দুধ আদর্শ প্রোটিন, যা আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে খুব সুন্দরভাবেই। তাই এই গরমের সময় সুস্থতার সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাইলে অবশ্যই ডিম এবং দুধ ও দুধজাতীয় খাবার রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। এভাবে নানা রঙের খাদ্য উপাদান দিয়ে যদি সকালের প্রাতরাশ থেকে শুরু করে রাতের খাবার এবং ঘুমানোর আগ অবধি মেন্যু ঠিক করা যায়, তাহলে এই তীব্র গরমের সময় ক্লান্তি দূর করে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা সম্ভব।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল উত্তরা, ঢাকা