ত্বক শরীরের প্রতিরক্ষা বেষ্টনি। সুস্থ থাকার জন্য ত্বক অক্ষত রাখা জরুরি। যদিও আমরা এর যত্ন নিয়ে বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা করি। এ জন্য ব্যবহার করি প্রসাধন সামগ্রী। অনেক সময় না-জেনেও আমরা প্রসাধনী ব্যবহার করি। এগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হই। প্রকৃতপক্ষে, ত্বক ঘিরে অনেক ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে। এখানে ত্বক সম্পর্কিত পাঁচটি ভুল ধারণার অবসান ঘটানো হলো।
ভুল ধারণা: তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগে না
সত্য: ত্বক তৈলাক্ত হলেও দিনে একবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। কেন? এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার ডার্মাটোলজিস্ট অ্যানি চিউ বলেন, ‘কারণ অনার্দ্রতা পুষিয়ে নিতে ত্বকের তেলগ্রন্থিগুলো অতিক্রিয়াশীল হয়। ফলে ত্বক আরো তৈলাক্ত হয়ে যায়।’
তৈলাক্ত ত্বকে হেভি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। লাইট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এ জন্য কেনার আগে লেবেলে ‘নন-কমিডোজেনিক’ লেখা আছে কিনা দেখে নিন। নন-কমিডোজেনিকের মানে হলো, ত্বকের ছিদ্র এরা বন্ধ করে না। এ ছাড়া তেলচিটে অনুভূতি ছাড়াই ত্বক আর্দ্র করতে ক্রিমের পরিবর্তে সিরাম বা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
ভুল ধারণা: ‘ডার্মাটোলজিস্ট-টেস্টে’- এ কথার মানে হলো কোনো ত্বক বিশেষজ্ঞ এই সামগ্রী ব্যবহারের সুপারিশ করেছেন
ভুল ধারণা: পায়ের ওপর পা তুলে বসলে ভেরিকোস ভেইনস হয়
সত্য: স্ফীত, পেঁচানো শিরাকে ভেরিকোস ভেইনস বলে। অনেকে মনে করেন, পায়ের ওপর পা তুলে ক্রসের মতো করে বসলে সমস্যাটি হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বসার ধরন নয়, বরং বসার স্থায়িত্বই ভেরিকোস ভেইনসের ঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘসময় বসে থাকেন তাদের মধ্যে সমস্যাটি দেখা দেয় বেশি। পায়ের ভালভস ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং গভীর শিরা থেকে ত্বকের পৃষ্ঠশিরায় রক্তের প্রত্যাবর্তন হলে সেই শিরাগুলো অধিক দৃশ্যমান হয় তথা ফুলে যায়- বলেন ডা. ফ্রাইডম্যান।
এ ছাড়া আরো কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। নারীদের ভেরিকোস ভেইনসের ঝুঁকি পুরুষদের দ্বিগুণ। এ ছাড়া যে নারীর পিতা বা মাতার সমস্যাটি রয়েছে, তার ঝুঁকি ৬০ শতাংশের ওপরে।
ভুল ধারণা: ত্বকে র্যাশ মানেই অ্যালার্জি
সত্য: কোনো কিছুর প্রতি ত্বক অ্যালার্জিক হলেই র্যাশ ওঠে। কিন্তু এর আরো অনেক কারণ আছে। সোরিয়াসিস, একজিমা, সিবোরিয়া ও গরমেও র্যাশ উঠতে পারে। কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের পর ত্বকে র্যাশ দেখলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না ওই প্রসাধনীতে অ্যালার্জি আছে। নিশ্চিত হতে টেস্ট করতে হবে।
ভুল ধারণা: ভিটামিন ই স্কার ও স্ট্রেচ মার্ক দূর করে
সত্য: ত্বকের ক্ষত নিরাময়ের পর যে দাগ অবিশষ্ট থাকে তাকে স্কার বলা হয়। অন্যদিকে স্ট্রেচ মার্ক হলো ত্বকের দ্রুত প্রসারণে সৃষ্ট দাগ। এসব দাগে ভিটামিন ই ক্রিম মাখলে দূর হয় না, বরং ত্বক উক্ত্যক্ত হয়ে চুলকাতে পারে। ডা. চিউ বলেন, ‘সময় পরিক্রমায় অধিকাংশ স্কার ও স্ট্রেচ মার্ক মিলিয়ে যায়, কিছু ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। তবে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আছে এমন ক্রিম ও লোশন, রেটিনল, ট্রেটিনয়েন ব্যবহার করলে কিছুটা উপকার পেতে পারেন।
রোদ এড়িয়ে চললেও উপকার পাবেন। ত্বকের দাগ খুবই উদ্বেগজনক বা বিব্রতকর হলে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতে পারেন। তিনি প্রয়োজনে লেজার থেরাপি ও মাইক্রোনিডলিং করবেন- উভয় মাধ্যমেই এসব দাগ সম্পূর্ণ দূর হয় না।