ডায়াবেটিসের সমস্যায় এখন প্রায় প্রতিটি ঘরেরই কোনো না কোনো সদস্য ভুগছেন! বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই রোগের আধিক্য সবচেয়ে বেশি। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা।
এটি তখনই ঘটে যখন অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা যখন শরীর কার্যকরভাবে উৎপাদিত ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না।
টাইপ ১, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, প্রিডায়াবেটিস ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে।
ঠিক একইভাবে ডায়াবেটিস হলে পায়েও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস পায়ে দুই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যেমন- ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি ও পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির কারণে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি করে। অন্যদিকে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজও রক্তের প্রবাহকে প্রভাবিত করে। ফলে পায়ে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। জেনে নিন কী কী-
>> ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হলো এক ধরনের স্নায়ুর ক্ষতি যা ডায়াবেটিস রোগীদের হতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি পায়ের স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফলে পায়ে ও হাতে ব্যথা কিংবা অসাড়তা বোধ হতে পারে। এমনকি এটি পাচনতন্ত্র, মূত্রনালি, রক্তনালি ও হৃৎপিণ্ডের সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে।
>> পায়ের আলসার ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। ডায়াবেটিক ফুট আলসার হলো একটি খোলা ক্ষত, যা প্রায় ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে পায়ের তলায় হয় আলসার।
পায়ের আলসারের কারণে ত্বক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে ঘা না কমলে এর থেকে পচনের সৃষ্টি হয়ে পা কেটেও ফেলা লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কারণে প্রথম থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
>> পায়ের তলায় বা আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হওয়ার সমস্যাকে অ্যাথলেটস ফুট বলা হয়। ডায়াবেটিস হলে এ সমস্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হলো ছত্রাক সংক্রমণ। যা পরে চুলকানি, লালভাব ও পায়ের গুরুতর ক্ষতের কারণ হতে পারে।
>> অনেকেরই পায়ে কড়া পড়ে কিংকা ভুট্টার মতো দানাযুক্ত মোল দেখা দেয়। ডায়াবেটিসের কারণেও এমন কর্নস বা কলাসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কর্নস পায়ের অস্থির অংশের কাছে বা পায়ের আঙ্গুলের মাঝখানে শক্ত অবস্থায় বেড়ে ওঠে। আর কলাস হলো পায়ের নীচের অংশে শক্ত ত্বকের গঠন, ওয়েবএমডি অনুসারে।
ক্যালস সাধারণত খারাপ ফিটিং জুতা বা ত্বকের সমস্যার কারণে হয়। আর কর্নস জুতার চাপের ফলাফল যা আপনার পায়ের আঙুলের সঙ্গে আঙুলের ঘর্ষণে সৃষ্টি হয়।
>> ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওনিকোমাইকোসিস নামক ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে, যা সাধারণত পায়ের নখকে প্রভাবিত করে। এটি বিবর্ণ (হলুদ-বাদামি বা অস্বচ্ছ), পুরু ও ভঙ্গুর নখের দিকে পরিচালিত করে।
>> পায়ে গ্যাংগ্রিনও দেখা দিতে পায়ে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে। ডায়াবেটিস রক্তনালিগুলোকে প্রভাবিত করে। ফলে হাত কিংবা পায়ের আঙুলে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যা পরে গ্যাংগ্রিনের কারণ হতে পারে।
রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ও টিস্যু মারা গেলে গ্যাংগ্রিন হয়। পায়ে গ্যাংগ্রিন দেখা দিলে তা কেটে ফেলতেও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
>> ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের বিকৃতিও ঘটতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হয়, ফলে পায়ের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে পায়ের বিকৃতি ঘটতে পারে।