শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা কমাতে অনেক সময় আমরা সেঁক দিই। আগে সব ধরনের ব্যথাতেই গরম সেঁক দেওয়া হত। বর্তমানে চিকিৎসকরা দুই ধরনের সেঁকের কথা বলে থাকেন, এক গরম এবং অন্যটি ঠান্ডা। ব্যথার ক্ষেত্রে দ্রুত আরাম পেতে গরম নাকি ঠান্ডা সেঁক কোনটি উপকারী তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে।
চলুন জেনে নেওয়া কখন কোন ব্যথায় কী ধরনের সেঁক দেবেন।
গরম সেঁক
গরম সেঁক বা তাপ দেওয়া হলে শরীরের ওই নির্দিষ্ট অংশে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধির স্টিফনেস বা জড়তা কাটাতে সাহায্য করে এই ধরনের সেঁক। কিন্তু কোনো ধরনের আঘাত পাওয়ার প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গরম সেঁক না দেওয়াই উচিত। এতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে প্রদাহ বা ফোলা আরও বাড়তে পারে। ফ্রোজেন শোল্ডার, মাংসপেশিতে টান, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, পেটের ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম সেঁক দেওয়ার জন্য একটি শুকনো তোয়ালে আয়রনের সাহায্যে গরম করে ব্যবহার করতে পারেন। তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়েও সেঁক দেওয়া যায়। অনেকে আবার হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে দীর্ঘসময় সেঁক দিতে পছন্দ করেন। মনে রাখবেন, গরম সেঁকে আঘাত পাওয়া অংশে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এর ফলে অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ে। এতে ব্যথা দ্রুত কমে। স্নায়বিক দুর্বলতায় অতিরিক্ত গরমের অনুভূতি অনেকে টের পান না। ফলে সেঁক দেওয়ার সময় বেশি গরমে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। মূলত হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা বা পেশিতে টান ধরার ব্যথায় এই সেঁক খুব কার্যকরী। পায়ের ব্যথার জন্য গরম পানিতে পা ডোবালে সাবধান থাকবেন। হাত দিয়ে গরম পানির তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে কীনা তা পরীক্ষা করে তবেই পা ডোবান।
ঠান্ডা সেঁক
মূলত প্রদাহ, আঘাতজনিত ব্যথা ও রক্তপাত তাৎক্ষণিকভাবে কমাতে সাহায্য করে ঠান্ডা সেঁক। এটি স্নায়বিক অনুভূতি সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখে, ফলে ব্যথা কমে। হঠাৎ কোথাও আঘাত পেলে, রক্তপাত হলে, জ্বর হলে, প্রদাহজনিত ব্যথায় (টেনডিনাইটিস, বারসাইটিস, একিউট আর্থ্রাইটিস) ঠান্ডা সেঁক দিলে উপিকার পাবেন। ঠান্ডা সেঁক দেওয়ার জন্য আইস প্যাক সবচেয়ে ভালো। বরফ জলে তোয়ালে ভিজিয়ে সেটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। চাইলে একটি প্লাস্টিক ব্যাগ বা পাতলা কাপড়ে বরফের টুকরো মুড়ে আইস প্যাক লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন, ফোলা বা প্রদাহ কমাতেই ঠান্ডা সেঁক দেওয়া হয়। আঘাত প্রাপ্ত অংশটি অসাড় করে দেয় ঠান্ডা সেঁক। এতেই ব্যথা কমে। শুধু ব্যাথাই নয়, ঠান্ডা সেঁক রক্তপাতও বন্ধ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরম সেঁকের তুলনায় ঠান্ডা সেঁক নিরাপদ। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।