ডা. হাসনা হোসেন আঁখি: ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা নিয়ে অনেকেই ভুগেন। নারীদের এ সমস্যা বেশি হলেও পুরুষরাও কিন্তু এ থেকে মুক্ত নন। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে সেখান থেকে ইউরিন ইনফেকশনের আশঙ্কা থেকে যায়।
পিরিয়ডের সমস্যা, নিয়মিতভাবে হরমোনের ওষুধ খেলে সেখান থেকেও এ সমস্যা হয়।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মূল কারণ হলো- ই কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রেই থাকে। একবার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট দিয়ে এ ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলেই সমস্যা বেশি হয়।
এ ছাড়াও মহিলাদের মূত্রদ্বারের কাছেই থাকে মলদ্বার। এ কারণেও কিন্তু ইনফেকশনের সমস্যা অনেক বেশি হয়। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অনেক সময় অবাধ ও অনিরাপদ যৌনতা থেকেও হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন। এ কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। সহবাসের পর অবশ্যই যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করাতে হবে।
যদি বারবার প্রস্রাব পায়, প্রস্রাবে যাওয়ার পরও যদি তা ক্লিয়ার না হয়, তলপেট ব্যথা করে জ্বর আসে, ইউরিনের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয় তাহলে কিন্তু সাবধান।
প্রতিদিন নিয়ম করে তিন থেকে চার লিটার পানি খেতে হবে। বাথরুম যেন পরিষ্কার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। যাবতীয় রোগের উৎস হলো এ ইনফেকশন। গোসল করার সময় গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করুন। অন্তর্বাস অবশ্যই সাবান দিয়ে পরিষ্কার রাখবেন। পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার আগে স্প্রে করে বসুন। মেয়েরা ব্যাগেও টয়লেট স্প্রে রাখবেন।
কারও যদি একান্ত প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েই যায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ইউরিন কালচারের মাধ্যমে আমরা অনেক সময় দেখি যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার জন্য আপনার প্রস্রাবে ইনফেকশন হচ্ছে কী না। এক্ষেত্রে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে থাকি। সঙ্গে প্রচুর পানি পান করার উপদেশ এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বলি। ক্রানবেরি জুস বা এর থেকে তৈরি বিভিন্ন ওষুধ আমাদের দেশে পাওয়া যায়, যা প্রস্রাবের ইনফেকশন প্রতিরোধে ভালো কাজ করে। এ ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক কোর্সের পর যাতে বারবার ইনফেকশন না হয় সে জন্য কিছু মেডিকেশন আমরা দিয়ে থাকি।
প্রস্রাবে ইনফেকশন থেকে অনেক সময় মূত্রথলি, কিডনি পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি জটিল সমস্যাও তৈরি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন থেকে অনেক সময় প্রিটার্ম লেবার এবং পানি ভাঙার মতো জটিলতা সৃষ্টি হয়।
লেখক: ফার্টিলিটি কনসালট্যান্ট ও গাইনোকলজিস্ট, বিআইএইচএস জেনারেল হসপিটাল, ঢাকা।