ডা. তারিক হাসান: আজকাল বেশির ভাগ মানুষেরই কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করতে করতে দিন চলে যায়। বাড়িতে ফিরেও মোবাইল কিংবা টিভি স্ক্রিনে থাকে চোখ। সব মিলিয়ে চোখ মোটেও বিশ্রাম পায় না। যেটুকু সময় আমরা জেগে থাকি, এর ৮০ শতাংশ সময়ই সঙ্গ দিচ্ছে মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ। এতে ডিজিটাল ডিপেন্ডেন্সি তো বাড়ছেই, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চোখের ওপর চাপ। একটানা অনেকক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপের আলো চোখের ওপর পড়া ঠিক নয়। আবার কাজ না করেও উপায় নেই।
চোখে যদি কোনো রকমের রিফ্র্যাক্টিভ এরর থাকে, তা কারেকশন করে নেওয়া উচিত। চশমার পাওয়ার যদি ঠিক থাকে, তাহলে অসুবিধা নেই। তবে যদি তা না থাকে, চশমার সাহায্যে দেখতে কোনো রকম অসুবিধা হয় বা মাথা ধরার প্রবণতা বোধ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করুন।
চোখ ভালো রাখতে একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপে কাজ করবেন না। মাঝেমধ্যে চোখকে একটু বিশ্রাম দিন। আধা ঘণ্টা পরপর এক-দুই মিনিট চোখ খোলা-বন্ধ রাখুন। একটু দূরে তাকাতে পারেন। সব সময় কাছে তাকালে চোখের সিলিয়ারি পেশিতে চাপ পড়ে। দূরে তাকালে চোখ রিল্যাপস থাকবে। মিনিটখানেকের বিরতি নিয়ে আবার কাজ শুরু করুন।
একটানা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা পানি পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। একে ডাক্তারি পরিভাষায় ‘ড্রাই আই সিনড্রোম’ বলা হয়। একটানা মোবাইল বা ল্যাপটপের আলোয় চোখ শুষ্ক হয়ে এ সমস্যা দেখা দেয়। এর থেকে চোখকে সুস্থ রাখতে মাঝেমধ্যে দ্রুত চোখের পলক ফেলুন। ঘন ঘন চোখ খোলা-বন্ধ করলে চোখের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
তা সত্ত্বেও যদি ড্রাইনেসের সমস্যা হয়, তাহলে লুব্রিকেটিং আইড্রপ বা টিয়ারড্রপ ব্যবহার করতে পারেন দিনে ৪-৫ বার। দিনে কয়েকবার চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিলেও উপকার পাবেন।
কাত হয়ে বা শুয়ে মোবাইল-ল্যাপটপ ব্যবহার করলে চোখের ওপর চাপ পড়বে। তাই এভাবে স্ক্রিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
যারা কনট্যাক্ট লেন্স পরেন, তারা একটানা আট ঘণ্টার বেশি লেন্স পরে থাকবেন না। কিছুক্ষণ খুলে আবার পরতে পারেন।
এখন মোবাইল বা কম্পিউটার সবকিছুতেই প্রটেক্টিভ স্ক্রিন লেয়ার থাকে। ফলে চোখের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কম। তবুও অতিরিক্ত ব্রাইটনেসে কাজ না করাই ভালো। চোখে যাতে না লাগে, অর্থাৎ চোখের কমফোর্ট লেভেল অনুযায়ী স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে নিন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী, গাজীপুর।