আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায় এমন কয়েকটি খাবারের মধ্যে অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার হলো ডিম। কারণ এতে রয়েছে শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন, খনিজ, ভালো ফ্যাট এবং প্রোটিনের ভাণ্ডার। তাইতো ডিমকে সুষম খাদ্য বলতেও পিছপা হন না পুষ্টিবিদদের একাংশ। তবে সমস্যা হলো, ডিমের মতো একটা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার নিয়েও কিন্তু রয়েছে একাধিক বিভ্রান্তি। যেমন অনেকের ধারণা, কাঁচা ডিম খেলে নাকি বেশি উপকার মিলবে। এমনকি এভাবে ডিম খেলে নাকি দেহে পুষ্টির ঘাটতি মিটতেও সময় লাগবে না। তাই শক্তি বাড়াতে অনেকে তিন-চারটে কাঁচা ডিম এক বসাতেই খেয়ে ফেলেন। ভাবেন, রান্না করলে হয়তো ডিমের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। এ জন্য কাঁচা ডিম খান।
এখন প্রশ্ন হলো, আদৌ কি কাঁচা ডিম খাওয়া উপকারী নাকি এভাবে ডিম খেলে ক্ষতির বহর বাড়ার আশঙ্কাই থাকে বেশি? এ বিষয়ে কী বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?
জেনে নিন—
> বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা ডিম খেলে বেশি শক্তি পাওয়া যায় বা শক্তি বাড়ে, কথাটি একেবারে ভুল। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা নেই; কাঁচা ডিম খেলে দেহের উপকারের পরিবর্তে অপকারই হবে। বরং এ থেকে নানা রোগব্যাধি হতে পারে।
> কাঁচা ডিম খেলে শরীরে প্রবেশ করতে পারে সালমোনেল্লা বা ওই ধরনের একাধিক জীবাণু। একবার এসব ব্যাকটেরিয়ার ফাঁদে পড়লে সমস্যার শেষ থাকবে না। সেক্ষেত্রে রোগী পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমির মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন। এমনকি ঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতেও পারে। তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই সুস্থ-সবল জীবনযাপন করার ইচ্ছা থাকলে কাঁচা ডিম খাবেন না।
> কাঁচা ডিমে রয়েছে অ্যাভিডিন নামক একটি উপাদান। এই উপাদান কিন্তু অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনকি এই উপাদানের কারসাজিতে আমাদের শরীর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বায়োটিন নামক ভিটামিনকে গ্রহণ করতে পারে না। এই কারণেই একাধিক জটিল সমস্যার ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই রোগমুক্ত জীবন কাটানোর ইচ্ছা থাকলে কাঁচা ডিম না খাওয়াই মঙ্গল।
> কাঁচা ডিম সহজে হজম হয় না। কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব হয়। এতে ওজন কমা, জিহ্বার রুক্ষতা, ত্বকের প্রদাহের সমস্যা হয়। এটি খেলে পেটের অসুখ, বমি, এমনকি টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে।’
> বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, কাঁচা ডিম খাওয়ার মতো হাফ বয়েল ডিম খেলেও ঠিক একই ধরনের সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা বাড়বে। তাই এখন থেকে ডিম হাফ বয়েল করে খাওয়ার লোভ সামলান।
> তাই ডিম কাঁচা নয়, বরং রান্না করে খাওয়া প্রয়োজন। ডিমকে আধা সেদ্ধ, ভাজা অথবা সেদ্ধ করে খেতে পারেন। ডিম রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না। কাঁচা ডিম খেলে বিভিন্ন রোগবালাই হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিদিনই কি ডিম খাওয়া যায়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি দিনে একটা ডিম খেতেই পারেন। তবে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার ও হাই কোলেস্টেরলের মতো অসুখ থাকলে গোটা ডিম খাওয়া উচিত হবে না। বরং আপনারা ডিমের সাদা অংশ খান। এতেই উপকার পাওয়া যাবে।