কম বয়সে চুল পড়া কমাতে কিছু উপায় দেখিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আঁচল পান্থ।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপে একজন পেশাদার বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হবে। এতে করে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন।
তিনি বলেন, চুল ভালোভাবে বৃদ্ধির জন্য উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া যদি কোনো ধরনের পুষ্টির ঘাটতি থাকে, তাহলে আগে সেটা ঠিক করতে হবে।
অনেকেই চুল পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই মিনোক্সিডিল বা ক্যাফেইনযুক্ত বিভিন্ন ক্রিম মাথায় ব্যবহার করতে শুরু করেন। মিনোক্সিডিল সাধারণত লিকুইড বা ফোম আকারে ব্যবহৃত হয়। এটি চুলের গোড়ায় রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে চুল বেশি দিন ধরে বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে ডা. পান্থ সতর্ক করে বলেন, মিনোক্সিডিল চুল পাতলা হওয়া কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু এতে নতুন চুল গজাবে না।
বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে হয় চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে কেটোকোনাজল ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্যানড্রাফ বা খুশকি প্রতিরোধেও এটি কার্যকর– কারণ খুশকি থেকে তৈরি হওয়া ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
মিনোক্সিডিলের চেয়ে আলাদা কেটোকোনাজল একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ, যা মূলত স্কাল্প বা মাথার ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের (ছত্রাকের সংক্রমণ) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
কিছু গবেষণা বলছে, কেটোকোনাজল ডিএইচটি হরমোনের মাত্রা কমাতে পারে, যা চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত।
ডা. পান্থ আরো বলেন, অনেকেই ভাবেন যে চুল পড়তে শুরু করলে চিকিৎসা নিলেই চুল গজাবে, তারপর আর কিছু করার দরকার নেই– কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। চুল পড়া রোধ করা হলো কেবল একটি দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার।
জীবনধারার পরিবর্তন
চুল পড়া কমাতে হলে সর্বপ্রথম নিজের চুলের ধরন সম্পর্কে জানা জরুরি। এর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ট্রাইকোলজিস্ট (চুল ও মাথার ত্বক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ) এনিটান আগিডি বিশেষত আফ্রো স্টাইলের চুল নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, শুরুর দিকে চুল পড়ার পেছনে কিছু হেয়ারস্টাইল, যেমন টাইট বা ভারী বেণী ও হিট স্টাইলিং (চুলে আয়রন বা তাপ প্রয়োগ করে যেসব স্টাইল করা হয়) দায়ী হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, চুলের যত্নের জন্য স্টাইলিং বোঝা জরুরি। চুলকে উপভোগ করুন। কিন্তু ভারী বা খুব টাইট করে চুল বাঁধলে তা চুলের গোড়ায় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।
চুলের গোড়াই মূলত চুল গজানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। এর পাশাপাশি মাথার ত্বকে ক্ষত নিরাময় ও নতুন করে চামড়া গজানোর কাজও এখানেই হয়।
আগিডি বলেন, অতিরিক্ত স্টাইলিং করার কারণে ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া ও ফ্রন্টাল ফাইব্রোসিং অ্যালোপেশিয়া– একসঙ্গে এই দুই ধরনের চুল পড়া রোগীও আমি দেখেছি।
ধূমপান, মদ্যপান, মানসিক চাপ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব চুল পড়া আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
ডা. আঁচল পান্থ বলছেন, ধূমপান ভাসোকন্সট্রিকশন নামের একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যা রক্তনালিকে সংকুচিত করে দেয়। ফলে মাথার ত্বকসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, যা চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
চুল বা মাথার ত্বক ভালোভাবে না ধুলেও চুল পড়া বাড়তে পারে। যদি দেখেন গোসলের সময় শ্যাম্পু না করার ফলেও চুল পড়ে, তার মানে এটাই এই রোগের লক্ষণ।
এ নিয়ে ডা. পান্থের পরামর্শ হলো, মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে প্রতিদিন বা একদিন পরপর চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনার মাথার ত্বক যদি স্বাভাবিক বা শুষ্ক হয়, তবে সপ্তাহে অন্তত তিনবার চুল ধোয়া উচিত।