নাসিম রুমি: একদিন সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গেলেন। এতে পা বেঁকে গেল। এরপর গেলেন চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখলেন হাড়ের ক্ষয় হয়েছে। হাড়ের ক্ষয় বলতে এর ভেতর ফাঁপা হয়ে যাওয়া বোঝায়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে অস্টিওপোরোসিস। অস্টিও মানে হাড়, আর পরোসিস মানে ছিদ্র হওয়া। মানে অর্থ ছিদ্রযুক্ত হাড়। এটি হলে হাড় পাতলা হয়ে এর জোর কমে যায়, ঘনত্ব ও গুণগত মান কমে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অস্টিওপোরোসিস হল হাড়ের এমন ক্ষয়রোগ, যা হাড়কে প্রচন্ডভাবে দুর্বল করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এ রোগে দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ আক্রান্ত। আর এদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে এবং জরায়ু অপসারণ করার পর হাড় ক্ষয়ের আশঙ্কা বাড়ে।
আমাদের দেহের হাড়ের ব্যাপার অনেকটা নদীর মত। এ যেন এ কূল ভাঙে, আর ও কূল গড়ে। অনেকের আবার জিনগত বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরণের ওপর হাড়ের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। বার্ধক্যে হাড় ক্ষয়ের ভয় বেশি থাকে। তাই অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সতর্ক হওয়া জরুরি।
হাড়ের জন্য উপকারী খাবার, যেমন: ক্যালসিয়াম, পনির, দুধ, দই, সয়া দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, মটরশুঁটি, বাদাম, ভিটামিন, খনিজ, শাকসবজি ইত্যাদি খেতে হবে। এ ছাড়া যেসব নিয়ম মানতে হবে সেগুলো হলো–
১. ধূমপান পরিহার করুন। এই বদ অভ্যাসের কারণে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
২. ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে বা থায়রয়েড ক্যানসারে হতে পারে হাড় ক্ষয়।
৩. বয়স্ক ব্যক্তিরা বারবার পড়ে গেলে হাড় ভাঙতে পারে।
৪. চোখের দৃষ্টি কম হলে, শরীর ভারসাম্যহীন হলে, ঘুমের ওষুধ খাওয়া খেলে হাড় ক্ষয় হতে পারে।
৫. শরীরচর্চা কম করলে, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন করলে হাড় দুর্বল হতে পারে।
৬. উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড খেলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
কি করে বুঝবেন
অনেক সময় ফ্র্যাকচার হলে ধরা পড়ে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘাড়ে ও কোমরে শিরদাড়ায় প্রতিনিয়ত ব্যথা করলে ধরা পড়ে। এ ছাড়া পেশিতে ব্যথা, দুর্বল লাগলে হাড় ক্ষয় হতে পারে।
কখন ঝুঁকি বেশি থাকে
১. বয়স বেশি হলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
২. পুরুষের তুলনায় নারীদের ঝুঁকি বেশি।
৩. পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
৪. প্রথমবার হাড় ভাঙার পর দ্বিতীয়বার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।
কীভাবে মোকাবেলা করবেন
১. নিয়মিত হাঁটা হাঁটি, শরীরচর্চা আর যোগাসন করলে হাড়ের যত্ন নেওয়া হয়।
২. রোদ পোহাতে হবে ভিটামিন ডির জন্য দরকার ক্যালসিয়াম।
৩. দুদ্ধজাত খাবার, মৌসুমি ফল,ডিম, মাছের তেল খেতে হবে।
৪. ধূমপান, মদপানের অভ্যাস থাকলে ছাড়তে হবে।