‘আইডিয়া পিঠা পার্ক’ মূলত শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি উদ্যোগ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যশোর শহরের খড়কী শাহ্ আব্দুল করিম রোডে অবস্থিত ব্যতিক্রম এ প্রতিষ্ঠানটি।
সাধারণ নতুন গুড়ের মিষ্টি স্বাদগন্ধ, চালের মিহি গুঁড়ায় তৈরি হয় ভাপা পিঠা। কিন্তু নানা অসুস্থতায় গুড়-নারিকেল মিশ্রণে এই পিঠাটি যারা স্বাদ নিতে পারেন না; তাদের জন্যই এই ভাপা পিঠা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন চালের মিহি গুড়া, লবণ আর গাজর মিশ্রিত এই পিঠাটি যাদের মিষ্টি খাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাদের জন্য তা কিন্তু নয়; একটু ঝাল স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণযুক্ত এই পিঠাটি সব বয়সীরাই খেতে পারবেন।
সংগঠনটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ গবেষণার সফলতায় সম্প্রতি দেশীয় পিঠার সম্ভারে যোগ হয়েছে এই পিঠাটি। এক বছরের গবেষণার সফলতায় তারা দেশীয় পিঠার সম্ভারে যোগ করেছে নতুন ৩০টি বাহারি পিঠার নাম ও স্বাদ। সর্বশেষ ইনস্টিটিউটের তালিকার নতুন নাম ‘গাজর ভাপা’।
এর আগে করোনা মহামারিতে ডুমুর, কালোজিরা, আদা, অলিভ অয়েল, চিকেন মিটসহ ১২টি ওষুধি মসলার সমন্বয় পিঠার সম্ভারে নতুন নাম যোগ করে ‘ইমিউনিটি পিঠা’। যা পিঠাপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘পিঠার মূলত দুটি কারণে ভ্যালু থাকে। প্রথমত এটা স্বাদ কেমন লাগছে, অন্যটি স্বাস্থ্য উপকারিতা। শীতকালীন যে ভাপা পিঠার বিশেষ্যত হলো সবাই নতুন গুড়ের স্বাদ নেওয়ার জন্য খায়। তবে গরম ধোঁয়া উঠা এই পিঠাটি সব বয়সীরা বিভিন্ন রোগ-সমস্যার কারণে খেতে পারে না। আবার ছোটদের জন্য পিঠার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ দিতে পারি; তাহলে তাদের দেহের জন্য ভালো। এতে পিঠারও প্রমোট হলো আবার তাদের স্বাস্থ্য উপকারিতার দিকও ভালো থাকে। সেটা ভেবেই আমাদের পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে গবেষণা করে এই ‘গাজর ভাপা’ দেশীয় পিঠার সম্ভারে যোগ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে নতুন কিছু সাধারণ মানুষের কাছে বোঝানো মুশকিল। তবে এ পিঠাটি মানুষের কাছে আগে থেকেই চাহিদা ছিল। মানুষ খুঁজে ছিল গুড় মিষ্টির ভাপা পিঠার বিকল্প নতুন কিছু। ফলে আমরা পিঠাটি নিয়ে সাড়া পাচ্ছি। ’
এই পিঠা পার্কের সাত জন উদ্যেক্তাদের মধ্যে একজন তানজিয়া জাহান মমতাজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পিঠা পার্কে বাংলাদেশ পিঠা গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেখানে প্রতিবছর নতুন নতুন পিঠার উদ্ভাবন করে থাকে। ‘গাজর ভাপা’ অন্যতম। অনেকেই ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন। তাদের জন্য মিষ্টি একেবারের অলিখিতভাবেই নিষিদ্ধ। তারা শীতের গরম গরম ভাপা পিঠা খেতে পারেন না। তাদের জন্য এই পিঠা খুবই উপকারী। কেননা এই পিঠাতে একটু ঝাল লবণ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ গাজর মেশানো থাকে। ফলে যারা মিষ্টি পছন্দ করেন না তারা এটির স্বাদ নিতে পারেন কোনো ধরনের চিন্তা ছাড়াই। ’
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি এবং প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. শিরীন নিগার বলেন, ‘গাজর দিয়ে গাজর ভাপা পিঠা অব্যশই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে; যাতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ‘গাজর ভাপা’ অন্যতম। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি, ভিটামিন ‘ই’ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এতে ত্বক ও চোখে জ্যোতি বাড়ে। ফলে এই পিঠার সব বয়সী মানুষের জন্য উপকারী। ’
দেশীয় ঐতিহ্যের পিঠার সম্ভার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে অন্য রকম এক সংগ্রামে নামে আইডিয়া পিঠা পার্ক। আইডিয়া পিঠা পার্ক মূলত শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি উদ্যোগ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১০১ ধরনের পিঠা দিয়ে। এখন সেখানে ১৩০ ধরনের ঝাল-মিষ্টি পিঠা পাওয়া যায়।
সংগঠনটিতে কাজ করা শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীর সবাই কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।