প্রতিদিনই কমবেশি সবার ঘরে আলুর নানা পদ তৈরি হয়। আলুর যে কোনো পদই খেতে দারুণ মাজার। এটি অনেক স্বাস্থ্যকরও বটে। তবে মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে অবশ্য এই সবজি এড়িয়ে যান।
আবার কঠোর ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে আলু খাওয়া সম্পূর্ণভাবে বাদ দেন। তবে খাদ্যতালিকা থেকে আলু একেবারে বাদ দেওয়া কি উচিত? আর কেউ যদি একমাস আলু না খান তাহলে তার শরীরে কী পরিবর্তন হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ভারতের গুরুগ্রামের সিকে বিড়লা হাসপাতালের চিফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট এবং এইচওডি (নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্স) প্রাচি জৈন।
তার মতে, ‘আলু অনেক অ্যানার্জেটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তারপরে যদি এটি বেশি তেল ব্যবহার করে রান্না করা হয়। তাহলে তাতে ক্যালোরি আরও বেড়ে যায়। তাই যারা ডায়েট করছেন তাদের অবশ্যই উচিত ক্যালোরি মেপে খাবার খাওয়া। না হলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
এই চিকিৎসকের সঙ্গে একমত আরেক পরামর্শক ডায়েটিশিয়ান শিবানী অরোরা। তিনি জানিয়েছেন, একমাসের জন্য ডায়েট থেকে আলু বাদ দিলে শরীরে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তার মতে, ‘আপনি যদি কম ক্যালোরিযুক্ত খাবারের সঙ্গে পরিমিত আলু গ্রহণ করেন তাহলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আলুর স্টার্চ রক্তে শর্করার দ্রুত বাড়ায়।
তাই আলু না পরিমিত গ্রহণ কিংবা না খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে খাদ্যতালিকা থেকে আলু অপসারণ দৈনিক কার্বোহাইড্রেটের মাত্রাও কমাতে পারে। যা সম্ভাব্য বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
এ বিষয়ে ভারতের ফরটিস এসকর্টস হাসপাতালের ফরিদাবাদের প্রধান ডায়েটিশিয়ান ড. কিরণ দালাল বলেন, ‘আলু দিয়ে তৈরি উচ্চ প্রক্রিয়াজাত পণ্য, যেমন- আলুর চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) থাকে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত।’
খাদ্যতালিকা থেকে আলু বাদ দেওয়ার যত অসুবিধা
আলুতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬ ও পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। অন্যান্য উৎস থেকে এসব পুষ্টি গ্রহণ না করলে তাদের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
একই সঙ্গে আলুতে খাদ্যতালিকাগত ফাইবারও আছে, যা হজমের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আলু না খেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে এমনকি অন্ত্রের স্বাস্থ্যেও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
একইভাবে জৈন উল্লেখ করেছেন, আলু খুব সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বত্র সহজলভ্য। এছাড়া আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও বয়স নির্বিশেষে প্রত্যেকের খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত, তাই আলু খাওয়া একেবারে বন্ধ করাও উচিত নয়।
ডা. দালালের মতে, ‘আলুতে পাওয়া যায় নিরাপদ স্টার্চ, যা এক ধরনের ফাইবার। এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। তাই আপনার খাদ্যে নিরাপদ স্টার্চ বাদ দিলে আপনার অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য প্রভাব পড়তে পারে।’
তাই আলু একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এটি কোন পদ্ধতিতে রান্না করে খাচ্ছেন সেদিকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। এ বিষয়ে জানিয়েছেন এনএইচএস ইউকে ও ডায়েটিক লিডের প্র্যাক্টো (নিবন্ধিত বিশেষজ্ঞ ডায়াবেটিস, ওজন ব্যবস্থাপনা ও ব্যারিয়াট্রিক্স ডায়েটিশিয়ান) বিলাসিনী ভাস্কর।
তার মতে, ‘আলু পুষ্টিকর খাবার হলেও এটি যেভাবে তেল-মসলা দিয়ে অস্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করা হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। উদাহরণস্বরূপ- সেদ্ধ আলুতে ভাজা আলুর চেয়ে কম ক্যালোরি থাকে।’
আলুর বিকল্প হিসেবে কী কী খাবেন?
>> মিষ্টি আলু
>> ফুলকপি
>> শালগম
>> পাকা কলা ভাজা বা বেক করা।
কারা আলু এড়িয়ে চলবেন?
ডা. দালাল বলেন, ‘যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা কম কার্বোহাইড্রেট খাবার খান, যাদের নাইটশেড অ্যালার্জি আছে, হজমের সমস্যা আছে, কিডনির সমস্যা আছে বা যারা ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তাদের আলু খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।’
‘এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, আলু অনেকের জন্য একটি সুষম খাদ্যের অংশ হতে পারে যদি তা পরিমিতভাবে খাওয়া হয় ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রস্তুত করা হয়।’