আসছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এবার রোজা গরমকালে পড়েছে। শীতকালের তুলনায় গরমকালে রোজা রাখাটা একটু কষ্টকর বৈকি। কারণ তাপমাত্রার প্রকোপ থাকে বেশি এবং রোজার সময়ের ব্যবধানও হয় বেশি। তাই চেষ্টা করুন সারাদিন রোজা রাখার পর কিছু স্বাস্থ্যকর এবং শরীর ঠান্ডা রাখে এমন খাবার খাওয়ার।
সেক্ষেত্রে আপনার ইফতারের তালিকায় প্রথমে রাখুন ভেজানো চিড়া। এটি বেশ স্বাস্থ্যকর। চিড়া পেট ঠান্ডা করে, পানির অভাব পূরণ করে এবং একইসাথে ক্ষুধা মেটায় কোনো প্রকার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছাড়াই।
তবে প্রতিদিন শুধু ভেজা চিড়া খেতে কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। তাই আসুন জেনে নিই এই রমজানে প্রতিদিনের ইফতারিতে চিড়া কতভাবে পরিবেশন করা যাবে।
দই চিড়া
রমজান বাদেও অন্যান্য সময় আমরা অনেকে রাস্তার পাশ থেকে বা বাসায় দই চিড়া খেয়ে থাকি। এর গুণাগুণের কারণে এটি আমাদের কাছে এতো প্রিয়। চিড়া খাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ভিজিয়ে রাখলে হয়। তবে দই যদি আপনি বাসায় বসাতে চান সেক্ষেত্রে জেনে নিন রেসিপি।
বাসায় দই বানানোর জন্য আপনার দরকার হবে- দুধ ১ লিটার, চিনি ২৫০ গ্রাম, পুরোনো দই ১০০ গ্রাম অথবা আধা কাপ, ৩/৪ টুকরা এলাচ এবং দারুচিনি এবং সামান্য লবণ (এক চিমটিরও কম)। পুরোনো দই বা দইয়ের বীজ বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে জ্বালিয়ে নিন। দুধ ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। পরে পুরোনো দই মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। চিনি বাদ দিয়ে আপনি টক দই বসাতে পারেন।
চিড়া আম
ইফতারে চিড়ার সঙ্গে পাকা আম রাখতে পারেন। সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে নেবেন খাওয়ার সময়।
লেবু চিড়া
চিড়ার সঙ্গে শুধু লেবুর রস এবং সামান্য লবণ মিশিয়েও ইফতার করতে পারেন। তবে যাদের লেবুর রসে গ্যাস্ট্রিক হয় তারা এটা এড়িয়ে চলবেন।
দুধ, কলা দিয়ে চিড়া
দুধ, কলা এবং চিড়া এই তিনটি খাবার একসঙ্গে বেশ সুস্বাদু। চিড়া আগে থেকে ভিজিয়ে রাখবেন। দুধ গরম করে ঠাণ্ডা করে রাখবেন।
চিড়ার ডেজার্ট
চিড়া দিয়ে যেকোনো খাবারই খুব দ্রুত তৈরি করা যায়। ইফতারে স্বাস্থ্যকর একটি পদ হতে পারে চিড়ার ডেজার্ট। বাসায় এই ডেজার্ট বানানোর জন্য আপনার দরকার হবে- ১৫০ গ্রাম চিড়া, হাফ লিটার দুধ, ১টি আপেল, ১টি কলা, ৪-৫টি খেজুর, ৩-৪টি শুকনো এপ্রিকট, ২ টেবিল চামচ চিনি, ১ টেবিল চামচ কাজু বাদাম, কিছু কিশমিশ।
চিড়া ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টার জন্য। এরপর পানি ঝরিয়ে নিন। একটি পাত্রে দুধ নিয়ে সামান্য চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিন। নামিয়ে ঠান্ডা করে রাখুন। এবার কলা ও আপেল টুকরা করে কেটে নিন। এবার পানি ঝরিয়ে নেওয়া চিড়ার মধ্যে ঠান্ডা দুধ দিয়ে দিন। এর উপরে কলা আর আপেলের টুকরা দিন। এরপর তার উপরে খেজুরের টুকরা, কিশমিশ, বাদাম কুচি ও শুকনো এপ্রিকট দিন। ব্যাস হয়ে গেল সুস্বাদু চিড়ার ডেজার্ট।
চিড়ার পোলাও
ইফতারে একটু নতুনত্ব আনতে ও ভারি খাবার হিসেবে চিড়ার পোলাও রাখতে পারেন। বাসায় খুব সহজেই চিড়ার পোলাও রান্না করতে পারেন। ভিন্ন ধরনের এই পোলাও রান্নার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন হবে তা হলো- ২ কাপ চিড়া, আধা কাপ টমেটো কিউব, ৩ টেবিল চামচ ঘি, সিকি কাপ রোস্টেড কাজুবাদাম, ২-৩টি কাঁচা মরিচকুচি, ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজকুচি, সিকি চা–চামচ হলুদগুঁড়া, আধা চা-চামচ ধনেগুঁড়া, আধা চা–চামচ মরিচগুঁড়া, আধা চা–চামচ জিরাগুঁড়া, আধা চা–চামচ আস্ত শর্ষে, আধা চা–চামচ আদাকুচি এবং স্বাদমতো লবণ ।
চিড়া ধুয়ে সামান্য পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। কড়াইতে ঘি গরম করে আস্ত শর্ষে ফোড়ন দিয়ে আদাকুচি, পেঁয়াজ ও টমেটো কিউব দিয়ে নেড়ে বাকি গুঁড়া মসলা দিন। একটু কষিয়ে নিন। ভেজানো চিড়া এ সময়ের মধ্যে সব পানি শুষে নেবে। এবার কষানো মসলায় চিড়া ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে হালকা টস করে নেড়ে দিন। চিড়ার সঙ্গে মসলা মিশে গেলে নামিয়ে নিন। পরবর্তীতে প্লেটে ঢেলে কাজু ছড়িয়ে ইফতারে উপভোগ করুন।
শরবত
সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে প্রাণ জুড়াতে শরবত হিসেবেও চিড়ার পদ রাখতে পারেন। জেনে নিন কিছু রেসিপি।
চিড়ার শরবত
এই শরবত বানাতে দরকার হবে আধা কাপ চিড়া, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, দুই গ্লাস পানি, চিনি স্বাদমতো, লবণ সামান্য পরিমাণ। চিড়া ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা। এরপর ভেজানো চিড়া, লেবুর রস, চিনি, লবণ সব একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যাস হয়ে গেল ইফতারে সুস্বাদু চিড়ার শরবত।
আম চিড়ার শরবত
ইফতারে শরবত হিসেবে আম চিড়ার সুস্বাদু শরবত রাখতে পারেন। এই শরবত বানাতে যা লাগবে- একটি বড় আম, আধ কাপ চিড়া (ভালো করে ধুয়ে এক চিমটি লবণ মাখিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন), চিনি চার থেকে পাঁচ টেবিল চামচ, পানি চার গ্লাস।
আম খোসা ছাড়িয়ে টুকরা করে নিন। এবার সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। মিষ্টি চেক করে দেখুন। চার গ্লাস পানি একসঙ্গে ব্লেন্ডারে না ধরলে অসুবিধা নেই। পরে পানি দিয়ে জগে করে মিশাতে পারবেন। নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন। ইফতারের সময় গ্লাসে ঢেলে পরিবারের সঙ্গে পান করুন মজাদার ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আম চিড়ার শরবত।
কলা চিড়ার লাচ্ছি
ইফতারে ঠান্ডা ঠান্ডা লাচ্ছি খেলে মিলবে প্রশান্তি। লাচ্ছি বলতে সাধারণত দই দিয়ে তৈরি পানীয়কে বোঝায়। তবে স্বাদে বৈচিত্র আনতে ও পুষ্টি বাড়াতে এতে যোগ করতে পারেন কলা ও চিড়া। কলা-চিড়ার লাচ্ছি বানাতে প্রয়োজন হবে এক কাপ চিড়া, একটি পাকা কলা, এক কাপ দুধ (জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করা), দুই টেবিল চামচ মধু, এক চিমটি লবণ, প্রয়োজনমতো আইস কিউব, চিনি স্বাদমতো।
চিড়া, দুধ, টকদই, কলা, চিনি, মধু ও লবণ একত্রে ব্লেন্ড করে নিন। আইস কিউব দিয়ে আবারও ব্লেন্ড করে ইফতারে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পান করুন কলা চিড়ার লাচ্ছি।
ইফতারে যথাসম্ভব ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। আর পুরো রমজান জুরে আপনার খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো রাখতে ভুলবেন না।