শ্বাসকষ্ট একটি সমস্যা। শীতকালে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। অন্যান্য সময়েও অনেকটা অকারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
মাঝে মধ্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে এমন এক বিশেষ ধরনের শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগী যান, যাদের শ্বাসকষ্টের কারণ খুঁজতে চিকিৎসক গলদঘর্ম হয়ে যান। প্রথাগত প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগের কারণের টিকিটির নাগাল পান না।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
শারীরিক কষ্টের মধ্যে শ্বাসকষ্ট আমাদের হতবুদ্ধি করে দেয়। প্রথমেই মনে পড়ে হার্টের রোগ আর হাঁপানি রোগের কথা। এটা ভাবার সঙ্গত কারণও আছে। এই রোগগুলোই আমরা সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। খেয়াল করে দেখবেন, জোর করে কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে থাকলে প্রয়োজনের তুলনায় শ্বাস নেয়া কম হওয়ার জন্য রক্তের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায় যেটা শ্বাসকষ্টের অনুভূতি সৃষ্টি করে। হার্টের রোগে যখন হৃদপেশির পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায় তখন ফুসফুসে রক্ত জমে গিয়ে ফুসফুসকে অনমনীয় করে তোলে আর শ্বাস নেয়ার জন্য বেশি শক্তি লাগে।
হাঁপানি রোগে ফুসফুসে হাওয়া ঢোকা-বেরোনোর শ্বাসনালী সরু হয়ে যাওয়ার জন্য জোরে জোরে শ্বাস নিতে হয়। এসব অবস্থাগুলো শ্বাসকষ্টের অনুভূতি উদ্রেক করে। শ্বাসযন্ত্রের কোনো সমস্যা না থাকলেও হৃদপিণ্ডে প্রয়োজনের চেয়ে কম রক্ত প্রবাহের রোগে (ইস্কিমিক হার্ট ডিজিস) বুকের ব্যথা অনেক সময়ে শ্বাসকষ্ট বলে অনুভূত হয়। এছাড়া বহুবিধ কারণে শ্বাসকষ্টের অনুভূতি হতে পারে। আবার জ্বরসহ বেশ কিছু শারীরিক রোগেও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর দহন বা মেটাবলিজম বেড়ে যাওয়ার জন্য নিঃশ্বাসের হার বেড়ে যায়। হাইপারভেন্টিলেশন সিন্ড্রোমের কারণটা যদিও খুব স্পষ্ট নয়, তবে এটার সঙ্গে উৎকণ্ঠা আর এক ধরনের ভয় পাওয়ার রোগের (প্যানিক ডিসঅর্ডারের) সম্পর্ক আছে। সে অর্থে এটা মনের রোগ।
এ ক্ষেত্রে শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করে শ্বাস নেয়ার জন্য রক্তের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শ্বাসের সঙ্গে অত্যধিক মাত্রায় বেরিয়ে যাওয়ার ফলে রক্তে ক্ষারের মাত্রা বেড়ে যায়। দেখা গেছে, উৎকণ্ঠা আর ভয় পেলে প্রায় ২৫ থেকে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে এক ধরনের শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয় যার কোনো শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। মানসিক কোনো সমস্যা নেই এমন ১১ শতাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক কারণ ছাড়াই শ্বাসের এক ধরনের কষ্ট হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে, রোগী ও তার পরিজনরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মহিলারা পুরুষদের চেয়ে এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হোন।