সাতক্ষীরায় ক্লাসে পড়া না পারায় শিক্ষার্থীদের দিয়ে জুতা পরিষ্কার করানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সোমবার (১১ এপ্রিল) সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বারপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুকুমার সরকার সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা ক্লাস নেওয়ার জন্য যান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা আক্তার। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়া না পারায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এরপর তাদের দিয়ে বিদ্যালয়ে পড়ে থাকা ময়লা জুতাও পরিষ্কার করান। বিষয়টি জানাজানি হলে তোপের মুখে পড়েন ওই শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুকুমার সরকার।
এ বিষয়ে সুকুমার সরকার দাবি করেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তার অত্যাচারে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। এ নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দফতরে অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার হয়নি।’
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক বিভাগীয় মামলা, জাতীয় দিবস পালন না করা, সময় মতো বিদ্যালয়ে না আসা, স্লিপের টাকা আত্মসাৎসহ বিদ্যালয়ের সরঞ্জাম চুরি করে বিক্রয় করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে ৯ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে নিজের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করান ওই শিক্ষক। এতে করে ওই শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারে না।’
অভিযুক্ত শাহানা আক্তার বলেন, ‘পড়া না পারলে কী মারাটা অপরাধ? অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের শাসন করতে পারেন, তাহলে শিক্ষকরা কেন নয়? আমরা শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের শাসন করার ক্ষমতা না রাখি তাহলে শিক্ষকতা কিসের জন্য? পড়া না পারাই ওই শিক্ষার্থীদেরকে বেত দিয়ে মারা হয়েছে।’
বিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য দফতরি রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দিয়ে কেন করানো হলো- জবাবে তিনি এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘দফতরি আমার কোন কথা শোনেন না। আমি অসুস্থ থাকি সবসময়। নিজে কোনও কাজ করতে পারি না। এ কারণে বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীদের দিয়ে জুতা পরিষ্কার করিয়েছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’