আজ শোনা যাক এক বাস্তব গল্পের নায়কের কথা। বাঘের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের গল্প! যেখানে বন্ধুকে বাঁচাতে মুহূর্ত দ্বিধা না করে বাঘের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাবলু হালদার। বাঘের পিঠে চড়ে, বাঘের গলা টিপে ধরে রেখেছিলেন তিনি, এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারছিলেন। কিন্তু কী ভাবে পারলেন? এতখানি সাহস ভর করল কোন শক্তিতে?
বাঘের মুখে তখন আর এক মৎস্যজীবী, মিহির সর্দার। বাঘের পিঠে বসে বন্ধু মিহিরের রক্তক্ষরণ দেখতে পাচ্ছিলেন বাবলু। তাই বাঘের গলাটা টিপে ধরেই রাখলেন তিনি। তারপরই বাঘ একসময় বেগতিক বুঝে মুখ থেকে শিকার ফেলে দেয়। মিহিরকে ছেড়ে বাবলুর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয় সেই বাঘের।
তবে বাবলু বাঘকে বাঘ বলে মনেই করেননি যেন। রাস্তার কুকুর আচমকা আক্রমণ করলে যা করতেন, তেমনভাবেই বাঘকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আবার যদি এমনটা হয়? প্রাণে বাঁচবেন কি? আবারও কি কাঁকড়া খুঁজতে যাবেন খাঁড়িতে?
আগে কলকাতায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন বাবলু। লকডাউনে কাজ হারিয়ে আবার গ্রামে ফিরে আসেন। আবার মাছ ও কাঁকড়া ধরেই কোনোমতে চলছিল, মা-ছেলের সংসার। তারপর দিন চারেক আগেই সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের খপ্পরে পড়েছিলেন বাবলু হালদার এবং মিহির সর্দার নামের সেই দুই মৎস্যজীবী। পড়ন্ত রোদে নৌকা বেঁধে, তার ওপর বসে রান্না করছিলেন যখন, জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিহিরের ওপর। তাঁকে বাঁচাতেই বাঘের ওপর পাল্টা ঝাঁপান বাবলু।
কিন্তু সে তো নিছক গল্প নয়! গল্পের নায়ক বাবলু হালদারও জীবন্ত এক চরিত্র। সদ্য ঝড়খালির বাড়িতে ফিরেছেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ। তবে ক্লান্তিহীন চোখ দুটো দেখলে চমকে যেতে হয়। বন্ধু মিহির সর্দার এখনও কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি। বাবলু তাঁকে বাঘের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেও তার জীবনযুদ্ধে ফিরতে দেরি আছে।
কিন্তু পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা! হিংস্র জন্তুর ভয়ে ঘরে বসে থাকলে যে পেট ভরবে না। তাই নির্ভীক বাবলুর সপাট উত্তর, মৃত্যুভয় তিনি পান না, বড় ভয় খিদে মেটানোর, সংসার টানার।