দু’কূলে কেউ নেই রাজিয়া বিবির। বসবাস সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামে। বয়সের ভারে শরীর নুয়ে পড়েছেন। কিন্তু, বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এটা রোজকার ব্যাপার। বর্ষাকালে পাত্রের অভাবে পানি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন না।
‘দিনি দু-তিনবার অনেক দূর হাঁটি পানি আনতি হয়। মাজায় আর পারে না বাবা। মনে হয় হাঁটু খুলি য্যাতিস। বাড়ি নি কোন বেটা ছাবাল। বর্ষাকালে যা পানি ধুরি রাখি তা পাত্রের অভাবে রাখতি পারিনি’, বলছিলেন রাজিয়া বিবি।
পানি সংরক্ষণের জন্য বিনা পয়সায় হাজার লিটারের ট্যাংক পেয়ে তিনি খুশিতে আত্মহারা। চোখেমুখে আনন্দের ছাপ, যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।
সুন্দরবন উপকূলের শতাধিক প্রান্তিক পরিবারের মাঝে পানির ট্যাংক বিতরণ করেছে চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ডু সামথিং ফাউন্ডেশন।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক শাহিন আলম, মাহমুদুল হাসান, বুলবুল, মামুন, মাসুম প্রমুখ সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, রমজাননগর, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও খুলনার কয়রা পয়েন্টে ১ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১১০টি পানির ট্যাংক বিতরণ করেন।
ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি বলেন, চারদিকে পানি কিন্তু পানযোগ্য পানি নেই। সুন্দরবন তীরবর্তী সাতক্ষীরার মানুষের এই অবস্থা দেখে আমাদের মনে ব্যপকভাবে নাড়া দেয়। তাই আমরা এই অসহনীয় কষ্ট থেকে মানুষকে কিছুটা মুক্তি দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নেই। উপকূল তীরবর্তী মানুষের খাবার পানির কষ্ট লাগবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সুন্দরবন উপকূলে খাবার পানির সংকট নৈমিত্তিক। তবে, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যের কারণে এই সংকট বহুগুণ বেড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে বছরের বড় একটি সময় চলে যায়। অসচ্ছল পরিবারগুলো পাত্রের অভাবে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করতে পারে না। মাটির কলস, ছোটখাটো পাত্র, কিংবা মাটির গর্তে পলিথিন দিয়ে যৎসামান্য সংরক্ষণ করে রাখে।
উল্লেখ্য, ডু সামথিং ফাউন্ডেশন উপকূলের প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।