যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামে কখনোই গরু জবাই হয় না। এমনকি ঈদের সময়ও কেউ গ্রামের মৌজায় কোরবানি গরু জবাই করেন না। গ্রামের যারা কোরবানি করেন, তারা পাশের মৌজায় গিয়ে গরু জবাই করে গোশত বাড়িতে আনেন। জনশ্রুতি আছে, গ্রামে কেউ গরু জবাই করলে তার পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
হাজরাখানা গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদরাসা রয়েছে। গ্রামের পূর্বপ্রান্তে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে রয়েছে এ অঞ্চলের পীর বলুহ দেওয়ানের মাজার। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার থেকে হয় ‘বলুহ মেলা’। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষের আগমন ঘটে। পীরের মাজারকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গ্রামের মানুষ পীর বলুহ দেওয়ানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কেউ গ্রামে গরু জবাই করে না।
গ্রামে গরু জবাই করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া গোশত ব্যবসায়ী (কশাই) পাশের পেটভরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হাজরাখানা গ্রামের রেজাউল নামে একজনের বাড়িতে খানা ছিল।
সেখানে আমি, বাবু ও রেজাউল রাত ১২টার পর গরু জবাই করি। এর ১০ মিনিট পরই খুব জোরে বাতাস হতে থাকে। পাশেই খুব বিশ্রী শব্দ হতে থাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। বাবুকে বলি- এসব কি হচ্ছে। বাবুর স্ত্রী ভয়ে ঘরে থাকতে পারছিল না। বাবু কিচ্ছু হবে না বলে সেখানে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আমরা পাশে আগুন জ্বালিয়ে গোশত কাটার কাজ করি।’
তিনি বলেন, ‘ওই গোশত কাটার সময়ই আমার পায়ে ছুরিতে লেগে একটা শিরা কেটে যায়। এরপর আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলাম। আমার পায়ে তিনবার অপারেশন করা লেগেছে। বাবু ওই গোশত কাটার কিছুদিন পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আর রেজাউল পড়ে গিয়ে মাজা ভেঙে অসুস্থ অবস্থায় আছে। আমাদের ধারনা গরু জবাই করার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। আমরা গ্রামের বহু মানুষের অনুরোধ উপেক্ষা করে জোর করেই গরু জবাই করেছিলাম।’
পীর বলুহ দেওয়ান মাজারের খাদেম জয়নাল শাহ্ বলেন, ‘আমার কয়েক পুরুষ এই মাজারের খাদেম। জন্মের পর থেকে দেখে আসছি গ্রামের মানুষ গ্রামে গরু জবাই করেন না। পীর সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষ গ্রামে গরু জবাই করেন না। তবে যারা গরুর গোশত খান, তারা নিজেদের বাড়িতে রান্না করে খেতে পারেন। এতে কেউ কাউকে বাধা প্রদান করে না।’
গ্রামের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, ‘গ্রামে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মানুষ বাস করেন। তাদের অনেকেই গরুর গোশত খান। তবে গ্রামে গরু জবাই করেন না। যারা করেন তারা পাশের মৌজায় জবাই করে বাড়িতে গোশত নিয়ে আসেন।’
নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও হাজরাখানা গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি গ্রামে গরু জবাই করা হয় না। তবে এ বিষয়ে কেউ কাউকে নিষেধ করে না বা বাধা দেন না ‘