সুন্দরবনে বাঘের তাড়া খেয়ে গাছে উঠে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন এক জেলে। তিনি সুন্দরবনের খালে কাকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হন। টানা দুই ঘণ্টা গাছে বসে থাকেন। পরে তার ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন পরিবারসহ স্থানীয় লোকজন।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর আমুরুল্লাহ খালে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসা ওই জেলের নাম ওমর ফারুক মোল্লা। তিনি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়মনি এলাকার বাসিন্দা।
রাতে ওমর ফারুক জানান, বনবিভাগের কাছ থেকে পাস পারমিট নিয়ে বুধবার সকালে তিনি আমুরুল্লাহ খালে কাঁকড়া ধরতে যান। দুপুর ২টার দিকে খালের পাশের গাছপালার মধ্যে শব্দ শুনতে পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখেন সেখানে একটি বাঘ। তিনি ঘুরে তাকাতেই বাঘটি তার ওপর হামলে পড়েন।
তাৎক্ষণিকভাবে ওমর ফারুক মাথা সরিয়ে ফেললে বাঘটি তার মাথার ওপর দিয়ে লাফিয়ে গিয়ে খালে পড়ে। বাঘটি খালে পড়ে যাওয়ার সুযোগে তিনি দৌড়ে একটি গাছে ওঠেন। গাছের মাথায় উঠে ছেলে সৈকত মোল্লাকে (২৩) ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। পরে লোকজন নিয়ে গিয়ে দুই ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আনেন।
জেলে ওমর ফারুকের ছেলে সৈকত বলেন, বাঘের তাড়া খেয়ে গাছে আশ্রয় নিয়ে তার বাবা তাকে ফোন করেন। এরপর তিনি তার খালু শাহেদকে নিয়ে তার বাবাকে উদ্ধারে যান। পথে কাঁকড়া ধরে ফিরছিলেন স্থানীয় জেলে শহিদুল ও বাদশা। তারা সৈকতকে দেখে জানতে চান, কোথায় যাচ্ছো? তখন তিনি তাদের বলেন, বাবা বাঘের তাড়ায় খেয়ে গাছে উঠে বসে আছে, আর বাঘ নিচে ঘুরছে। তাকে আনতে যাচ্ছি। তখন ওই দুই জেলেসহ চারজনে গিয়ে ওমরকে গাছ থেকে উদ্ধার করে আনেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজমুল হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনা সত্য। আমি খোঁজখবর নিয়েছি এবং তার ছেলে সৈকত ও সৈকতের খালু শাহেদের সঙ্গে কথা বলেছি তারাই উদ্ধার করে এনেছে। তারা সেখানে বাঘের পায়ের অনেক ছাপও দেখে এসেছেন।’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে সহকারী বন সংরক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, জয়মনি গ্রামের ওমর ফারুক মোল্লা পাস নিয়ে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর একটি খালে কাঁকড়া ধরতে যায়। পরে সেখানে বাঘের আক্রমণের শিকার হলেও তার শারীরিক কোনো ক্ষতি হয়নি তার। তবে ভয় পেয়েছেন। এখন তিনি তার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
তিনি আরও বলেন, বাড়ি ফিরে ওই ব্যক্তি ভয়ে আবোলতাবোল বলছেন বলেও শুনেছি। এও শুনেছি যে আক্রমণ করা বাঘটি তার মাথার ওপর দিয়ে লাফিয়ে যায়। তখন তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দৌড় দিয়ে একটি বড় গাছে উঠে প্রাণে রক্ষা পান।