আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। এবারের আসর বসছে মরুর দেশ কাতারে। বিশ্বের সাথে ফুটবলের এ উন্মাদনায় পিছিয়ে নেই ফরিদপুরও। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল স্টেডিয়ামের আদলে ফরিদপুরে তৈরী করা হয়েছে ৮টি স্টেডিয়ামের রেপ্লিকা।
স্টেডিয়াম গুলো দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ফরিদপুর শহরের ভাজনডাঙ্গা টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে এ স্টেডিয়াম গুলো তৈরী করেছেন স্থানীয় যুবক, কাতার প্রবাসী মাসুদুর রহমান।
মাসুদুর রহমান দীর্ঘ ১০ বছর কাতারে রয়েছেন। কাতারে থাকার কারণে তিনি বিশ্বকাপের খেলাগুলো যে সকল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, সেই স্টেডিয়ামগুলোতে তিনি গিয়েছেন এবং খেলাও দেখেছেন। সে চিন্তা থেকেই তিনি তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে এইরকম স্টেডিয়ামের আদলে স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেন।
দেড় মাস আগে মাসুদুর রহমান দেশে আসেন এবং নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে নিয়ে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২ দলের পতাকা থাকবে মাঠে। খেলা চলাকালীন সময়ে বড় পর্দায় খেলাগুলো দেখানো হবে। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে যারা খেলা দেখতে আসবেন তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
কাতারে যে আটটি স্টেডিয়ামে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হলো, আল থোমামা (টুপির মত আকৃতি), মদিনা খলিফা (পালতোলা নৌকা আকৃতি), নাইন সেভেন ফোর (সমুদ্রের পাড়ে), আল বাইয়াত (দূরে অবস্থিত), আল রাইয়ান (জাহাজের মত), লুসাইল (বাটির মত), আল জয়নু (শামুক) ও এডুকেশন সিটি। এসব স্টেডিয়ামের আদলেই ফরিদপুরে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামগুলো। এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ, বাঁশ, পাঠখড়ি, পিভিসিসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে।
ফুটবলপ্রেমী মাসুদুর রহমান বলেন, প্রথমে এই স্টেডিয়ামগুলোর নকশা জোগাড় করি। এরপর ভালোভাবে পর্যালোচনা করি। তারপর সিদ্ধান্ত নেই বাংলাদেশে আসবো। মনে হলো নিজে কাতারের মাঠে বিশ্বকাপ খেলা না দেখে এরকম কিছু করি যাতে দেশের মানুষ সেখানে বসে খেলা দেখবে আর ভাববে কাতারের মাঠে বসেই খেলা দেখছি। দেড় মাস আগে কাতার থেকে দেশে আসি। এরপর বাড়ির পাশে ভাজনডাঙ্গার টিবি হাসপাতালের সামনের একটি মাঠে স্থানীয় যুবক-তরুণদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করি।
মাসুদুর রহমান বলেন, আমি আর্জেন্টিনা দলের সমর্থক। আমার এই কর্মযজ্ঞে ২০-২৫ জন যুবক-তরুণ রয়েছে। প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, কাতারে আটটি স্টেডিয়াম যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, এখানেও সেই আদলে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, নিজের মনে তৃপ্তির জন্যই এই ব্যতিক্রম আয়োজন করেছি। এতে তার প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। স্টেডিয়াম তৈরির পাশাপাশি আরও কিছু আয়োজন রয়েছে। প্রতিটি খেলা এখানে বড় পর্দায় দেখতে পাবে সবাই। দূর-দূরান্ত থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য মাঠের পাশেই বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে বলা হয়েছে, তাদের থাকতে দেওয়ার জন্য। খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া মাঠের চারপাশে ৩২ দলের পতাকা উড়ানো থাকবে। এছাড়া উদ্বোধনী দিনে মিলনমেলার আয়োজন করা হবে। নিজে কাতারে খেলা না দেখে এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে সেই আবহ তৈরি করতেই তার এ উদ্যোগ।
এস এ মান্নান ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। ফুটবল প্রিয় ছোট বড় সকলের জন্য ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছেন মাসুদুর রহমান। বড় পর্দায় খেলা দেখা ও কাতারের আদলে স্টেডিয়াম গুলো তৈরী করাতে স্থানীয়রা বেশ খুশি।
স্থানীয় বাসিন্দা এস এম রুবেল বলেন, এই ধরনের ব্যতিক্রম উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কাতারে গিয়ে নয়, দেশের মাঠে বসেই কাতারে খেলা দেখার স্বপ্নপূরণ হবে।