শীতকে বরণ করে ঝিনাইদহের শহর ও গ্রামে ঘরে ঘরে চলছে কালাই আর চালকুমড়া দিয়ে বড়ি তৈরীর কাজ। বেশীরভাগ গৃহিনীরা নিজেদের খাওয়ার জন্য তৈরী করছে বড়ি আবার অন্যদিকে কয়েকশত পরিবার কুমড়াবড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। গৃহিনীরা এখন কুমড়া ও কালাই ডাউল মিশ্রিত বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গ্রামের প্রায় বাড়ির চালে ও মাচাই শোভা পাচ্ছে বড়বড় চাল কুমড়া, যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কুমড়াবড়ি। কেউ কাজ করছে ঢেঁকি দিয়ে, কেউবা সাহায্য নিচ্ছেন শিলপাটার। আবার অনেকে বৈদ্যুতিক মেশিনের মাধ্যমে। এক কথায় কুমড়াবড়ি তৈরীর ধুম পড়েছে পাড়ায় পাড়ায়। শীতের সকালে পাড়া-মহল্লার গৃহিনীরা বাড়ির ছাদে একত্রে দল বেঁধে,আবার কেউ কেউ মাটিতে মাদুর বিছিয়ে বড়ি তৈরীর কাজ করছে।
বড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত কালাইয়ের ডালের সাথে চালকুমড়ার পরিবর্তে অনেকে মূলা অথবা পেঁপে ও পিয়াজ ব্যবহার করে থাকেন। শীত এলেই গ্রামাঞ্চলের লোকজন বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পাড়ার অনেক পরিবার একত্রিত হয়ে বড়ি বানাই। মূলত শীতের মৌসুমে কুমড়া বড়ির বাজার ধরতে আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ এই তিন মাস কুমড়াবড়ি তৈরি করা হয়। ২-৩ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে প্রস্তত করা হয় সুস্বাদু এই বড়ি।
এব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, শীতে বড়ি ছাড়া তরকারি রান্না অপূর্ণ থেকে যায়, বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। এছাড়া বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলুর তরকারির স্বাদই আলাদা। তাই শীতের আগমনে আমরা বড়ি তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
গাড়াখোলা গ্রামের ওয়াহিদ হাসান জানান, ৩০ বছর যাবত এই কাজের সাথে জড়িত। মেশিনে কুমড়াবড়ি তৈরী করি। ডাল ও মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় কুমড়াবড়ি তৈরিতে খরচ বেশি পড়ছে ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন আমার মেশিনে ৩০০ কেজি বড়ি তৈরী হয়। এই বড়ি তেরী করতে আমার খরচ হয় ৩০০০০ হাজার টাকা আর বিক্রি হয় ৩৫০০০ হাজার টাকা। আর প্রতিদিন ৩০ জন মহিলা শ্রমিক সকাল ৮ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত কাজ করে আর এদের প্রত্যেককে ৬০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
সাধারণত পাইকারী ১৬০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হয়। গাড়া খোলা চরের বড়ি শ্রমিক ববিতা বেগম জানান,আমরা মেশিনে বড়ি তৈরীর কাজ করি। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কাজ করা বাবদ ৬০/৭০ টাকা করে মালিকের কাছ থেকে পাই। হাটবাজারে প্রতি কেজি কুমড়াবড়ি ১৩০/১৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে। আবার অনেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে নিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন।
এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছে শৈলকুপার গৃহিনীরা ও বড়ি মহিলা শ্রমিকরা। সরকারী সাহায্য পেলে এই খাতকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন