ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আখতার জানিয়েছেন, বর্তমানে পুরুষেরাও নারীর হাতে নিগ্রহ হচ্ছেন। রাজধানী ঢাকাতে ৬০ ভাগ পুরুষ নারীর হাতে নির্যাতনের শিকার। নারীবাদী মানে পুরুষকে অস্বীকার করা নয়। পুরুষদের অস্বীকার করেও কিছু করা সম্ভব নয়।
ফরিদপুরে ‘করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের বাবা, ভাই, স্বামী সকলেই পুরুষ। তাদেরও দরকার রয়েছে। বরং নারী শিক্ষার প্রসার দরকার এই নিগ্রহ ও নির্যাতনের প্রতিকারের স্বার্থে।
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয় রোববার (২২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয় বিভাগের মিলনায়তনে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা। প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আখতার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুর রহমান।
প্রবন্ধে বলা হয়, করোনাসৃষ্ট আজকের এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিকুলাম ব্যবস্থা বদলাতে হবে। আজ আমরা আমাদের শিক্ষা খাতে যেসব সংকট দেখছি, তার কিছুটা রাজনীতিকরণের ফল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিক্ষা খাতে যে অগ্রগতি দেখছি, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উচিত আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ভালো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা এবং তাদের সফলতা কীভাবে এসেছে তা খতিয়ে দেখা। একই সঙ্গে দেশের স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে শিক্ষা ব্যবস্থায় সুস্থ রাজনীতি চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, আমাদের সরকারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে দায়বোধের সংকট রয়েছে। যে দেশে কতিপয় শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন যথারীতি পাঠদান করেন না, সেখানে কেবল অনলাইন প্রযুক্তির ব্যবহার করোনাকালে শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না। গ্রামীণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও আমাদের শিশু ও তরুণদের উপযোগী করতে পারিনি। শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার বেড়েছে কিন্তু মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
পঠিত ওই প্রবন্ধে এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ১০টি পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সেগুলো হলো, সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও টিকা নিশ্চিত করা, শেখার সব টুলগুলোতে প্রবেশ নিশ্চিত করা, কার্যকর বিকল্প শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা, শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া হ্রাস করা, অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাবর্ষের পুনরাবৃত্তি করা, কারিকুলাম ও পাঠ্যক্রম সংকুচিত করা, মেকআপ ক্লাস বৃদ্ধি করা, ব্রেকআউট গ্রুপ ও বিশেষ টিউটরিং করা এবং শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ কমিয়ে আনা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ বি এম সাইফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. আশরাফুল আজম ও উপাধ্যক্ষ এসএম আবদুল হালিম।