রাজধানীর গণপরিবহনে মধ্যবয়সী (৪০-৫৯) পুরুষের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার ৬১.৭ শতাংশ কিশোরী-তরুণী। ৩৬.৩ শতাংশ কিশোর ও যুবকের (১৩-৩৯) মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার আঁচল ফাউন্ডেশন ‘ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি; কিশোরী ও তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব’ শীর্ষক এক জরিপের ফল প্রকাশ করতে একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে। এতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
শুধু ঢাকা শহরের আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার ১৩ থেকে ৩৫ বছরের নারীরা জরিপে অংশগ্রহণ করেছে। ৮০৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৬৮.৪ শতাংশ। কিশোরী বিবেচনায় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১৩.২ শতাংশ। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১২.৫ শতাংশ এবং ৩১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫.৮ শতাংশ। জরিপটিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা ৮৬.০৯ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৯.০৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া, ১২.৮০ শতাংশ কলেজপড়ুয়া এবং ৪.২২ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী ৭.৭০ শতাংশ কর্মজীবী এবং ৪.৩৫ শতাংশ গৃহিণী। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহের জন্য সরাসরি ও অনলাইন পদ্ধতির সমন্বয় করা হয়। গণপরিবহনগুলোর মধ্যে বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিং ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
জরিপের উপাত্ত অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গত ছয় মাসে ৬৩.৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী গণপরিবহনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬.৫ শতাংশ বলেছে, তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ১৫.৩ শতাংশ বুলিং, ১৫.২ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৪.৯ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য এবং ৮.২ শতাংশ বডি শেমিংয়ের (শারীরিক গঠনের লজ্জা) মতো হয়রানির শিকার বলে জরিপে উঠে এসেছে।
যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের ৭৫ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের অন্য যাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ২০.৪ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের হেল্পাররা এ ধরনের হয়রানি করেছে। ৩ শতাংশ হকারের মাধ্যমে এবং ১.৬ শতাংশ ড্রাইভারের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র বা বিবিধ কাজে যাতায়াতের প্রয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৯.৪৪ শতাংশ গণপরিবহনে এবং ৬.৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব যানবাহনে আসা-যাওয়া করে। এ ছাড়া ২.৭৩ শতাংশ চলাচলের জন্য ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। গণপরিবহনে চলাচলকারীদের ৮৪.১০ শতাংশ বাসে, ৪.৫৮ শতাংশ ট্রেনে, রাইড শেয়ারিংয়ে ১.৫৩ শতাংশ যাতায়াত করে। সিএনজি ব্যবহার করে ৩.২৭ শতাংশ। ৬৩ শতাংশ নারীকেই হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়।
গণপরিবহনে হালকা ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কিশোরী ও তরুণীরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছে, যা ৩২.৮ শতাংশ। অতিরিক্ত ভিড় যৌন হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.২ শতাংশের ক্ষেত্রে। বসে থাকা অবস্থায় যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে ২২.৯ শতাংশ। গণপরিবহনে ওঠা বা নামার সময় ১১.৩ শতাংশ নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৭.৬ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী মনে করে, কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়ায় রাজধানী ঢাকা শহরের প্রতিটি সড়কে নারীদের জন্য সংরক্ষিত বাস বাড়ানো উচিত। ৯৪ শতাংশ মনে করে, নারীদের সংরক্ষিত আসন বাড়ানো প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসাইন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।