মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলা বিশ্বব্যাপী প্রবল প্রতাপে চলছে।চলমান এ আগ্রাসনের শেষ কবে হবে তা এখনো অজানা। প্রথম আক্রান্তের সাড়ে ১১ মাস পরে এসে আমরা যদি শুধু নভেম্বর ২০২০ মাসের হিসেব করি অর্থাৎ ১ নভেম্বর’২০ সকাল ১০টা থেকে ১ ডিসেম্বর’২০ সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩০ দিনে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭২ লাখ ২৭ হাজার ৭৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৩৬ জন করে।যেখানে অক্টোবর মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৬ জন করে। অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বরে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
নভেম্বরে ৩০ দিনে মোট মৃত্যু ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৫ জনের বা প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার ১১২ জন করে। যেখানে অক্টোবর মাসে মোট মৃত্যু ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ১১৮ জনের বা গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু ছিল ৫ হাজার ৮৩৭ জন করে। অর্থাৎ অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয় সংখ্যা বেড়েছে।
আমরা যদি গত ৩০ দিনে করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যাটা দেখি তাহলে দেখা যায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ২৬৭ জন বা দিনে গড়ে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৬ জন করে।
গত একমাসে করোনার থাবা কোন কোন দেশে বেড়েছে আশংকাজনকহারে।আবার কোন কোন দেশে কমেছেও।নভেম্বর এর প্রথমদিন আক্রান্তের ক্রমানুসারে প্রথম বিশটি দেশ ডিসেম্বর এর প্রথম দিনে এসে অনেকটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। যেমন নভেম্বর এর প্রথমদিনে প্রথম ২০টি দেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র,ভারত,ব্রাজিল,রাশিয়া,এরপর যথাক্রমে আছে ফ্রান্স,স্পেন,আর্জেন্টিনা,কলোম্বিয়া,যুক্তরাজ্য,মেক্সিকো,পেরু,সাউথ আফিকা,ইতালী,ইরান,জার্মানী,চিলি,ইরাক,বেলজিয়াম,ইন্দোনেশিয়া,ও বাংলাদেশ।
কিন্তু ১ ডিসেম্বর এসে এচিত্রে বেশ রদবদল ঘটেছে।তালিকার সর্বোচ্চ ৪টি স্থানে যুক্তরাষ্ট্র,ভারত,ব্রাজিল ও রাশিয়া স্থির থাকলেও অন্যান্য অবস্থানে রদবদল হয়েছে।এরপর যথাক্রমে আছে ফ্রান্স,স্পেন,যুক্তরাজ্য,ইতালী,আর্জেন্টিনা,কলোম্বিয়া,মেক্সিকো,জার্মানী,পোলান্ড, পেরু,ইরান,সাউথ আফিকা,ইউক্রেন,তুরস্ক,বেলজিয়াম,ইরাক।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে,ইতালী, স্পেন, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনা সংক্রমন আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে।এদিকে অক্টোবরে শীর্ষ বিশে না থাকলেও নভেম্বরে পোলান্ড,ইউক্রেন উঠে এসেছে।
এবার যদি একনজরে ৩০দিনে শীর্ষ ২০টি দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৮২ জন করে।অক্টোবর থেকে নভেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন বা আড়াইগুণ।
ভারতে ৩০ দিনে ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩৭৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪২ হাজার ৬৭৯ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।অক্টোবর থেকে নভেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ভারতে।
৩০ দিনে ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৬৭৩ জন বা প্রতিদিন গড়ে ২৬ হাজার ৬৮৯ জন করে।অক্টোবর থেকে নভেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
রাশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৮ জন।যা প্রতিন গড়ে ২২ হাজার ৫৮৫ জন করে।অক্টোবর থেকে নভেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে।
ফ্রান্সে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৪৯৫ জন করে।গত এক মাসে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
স্পেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ১২৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার ৩৩৭ জন করে।গত একমাসে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
যুক্তরাজ্যে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৯০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার ৬০০ জন করে।গত এক মাসে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ বেড়েছে।
ইতালীতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ২২ হাজার ১২৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার ৭৩৭ জন করে।গত এক মাসে ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
আর্জেন্টিনায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬০৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৫৮৭ জন করে।গত একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
কলম্বিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৬২২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৮৭ জন করে।গত একমাসে কলোম্বিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
মেক্সিকোতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৬০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ২৭৫ জন করে।গত একমাসে মেক্সিকোতেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
জার্মানিতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার ৯৩২ জন করে।গত একমাসে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩গুণ।
পোলান্ডে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৯ হাজার ৫৭১ জন করে।নভেম্বরের ১ তারিখ পোলান্ড শীর্ষ বিশে ছিলনা। সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় নভেম্বরে পোলান্ড ১৩ নম্বরে উঠে এসেছে।
পেরুতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ১০২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৩৭ জন করে।গত একমাসে পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
ইরানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ৬৪৩ জন করে।গত একমাসে ইরানে সংক্রমণ প্রায় ৩গুণ বেড়েছে।
সাউথ আফ্রিকায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৫৫২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ১৫২ জন করে।
ইউক্রেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ১৩৭ জন করে।ইউক্রেন অক্টোবরে শীর্ষ বিশে ছিল না।সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নভেম্বরে ১৭ তম স্থানে উঠে এসেছে।
তুরস্কে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৫২৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৮৪ জন করে।তুরস্ক অক্টোবরে শীর্ষ বিশে ছিল না।সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নভেম্বরে ১৮ তম স্থানে উঠে এসেছে।
বেলজিয়ামে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ৪৭৬ জন করে।বেলজিয়ামে নভেম্বরে সংক্রমণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
ইরাকে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৬৬৪ জন করে।ইরাকেও আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
বাস্তবতা হলো, মানুষ করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ভাইরাসটি এতোই শক্তিশালি যে প্রতিনিয়ত সে আরও তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। অথচ এখন পর্যন্ত করোনার কোনও কার্যকরী টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস গেব্রিয়েসাস আধানম বলেছেন, ‘করোনা মহামারি নিয়ে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবে এরপরও সতর্ক থাকতে হবে।’
আধানম বলেছেন, ‘আমরা হয়তো কোভিড-১৯ নিয়ে ক্লান্ত। তবে এটি আমাদের নিয়ে ক্লান্ত নয়। ইউরোপীয় দেশগুলো লড়াই করছে। কিন্তু ভাইরাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি কিংবা এটি মোকাবিলায় খুব বেশি পদক্ষেপও নেওয়া যায়নি।’
শেষ কথা হল,কোনো দেশই আগাম এমনটা বলতে পারে না মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হয়ে গেছে।
লেখকঃ সাংবাদিক,সমাজকর্মী।
০১৭১৬৪৯৩০৮৯
email: smazadh@yahoo.com
নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৭২ লাখ ২৭ হাজার ৭৫ জন জন
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন