গত দেড় বছর ধরে পুরো বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস একনাগারে আতংক সৃষ্টি করে চলেছে।মানুষের জীবনাচার তছনছ করে দিয়েছে।বিশ্ব অর্থনীতি হয়েছে লন্ডভন্ড।নিত্য রুপ পরিবর্তনে ভাইরাসটি হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী এক মূর্তিমান আতংক।এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছেন।বিশ্বমোড়লদের অবস্থাও তথৈবচ।যদিও ইতোমধ্যে টিকা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে তবে তা মানবদেহে প্রকৃতপক্ষে কতটা কার্যকর এবং ভাইরাসটির পরিবর্তিত রুপে আদৌ কার্যকর কীনা তা নিয়ে গবেষণা এখনো চলমান।
বিশ্বব্যাপী এর আগ্রাসন এতটা ভয়াবহ যে, গত দেড়বছরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে অনেক মূল্যবান প্রাণ অকালে ঝরে গেছে।এতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে পুরো বিশ্বের।কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ সময় (২১ মে) সকাল ১০টা পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯০১ জন মানুষের।যা করোনায় মোট আক্রান্তের ২% বা ২ শতাংশ।
বিশ্বের ২২০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বেশী ক্ষতি হয়েছে ইউরোপে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইউরোপে ইতোমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ জনের।এরপর উত্তর আমেরিকার দেশগুলিতে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৫২ জনের।দক্ষিণ আমেরিকায় মৃত্যু হয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৯ জনের।এশিয়ার দেশগুলিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৬১৭ জনের।আর আফ্রিকার দেশগুলিতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৬২ জনের।
এসব দেশগুলির মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে এমন কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান যদি দেখি তাহলে দেখা যায়-
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ লাখ ২ হাজার ৬১৬ জন।গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৬৫৯ জনের।
মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে মৃত্যু ২ হাজার ৫২৭ জনের।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে মোট মৃত্যু ২ লাখ ৯১ হাজার ৩৬৫ জনের।গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে মৃত্যু ৪ হাজার ২০৯ জনের।ভারত বর্তমানে দৈনিক করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
এর পরের অবস্থানে রয়েছে উত্তর আমেরিকার আরেক দেশ মেক্সিকো।মোট মৃত্যু ২ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ জনের।
ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য। মোট মৃত্যু ১ লাখ ২৭ হাজার ৭০১ জনের।অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে দেশটিতে করোনার প্রকোপ বিপদসীমার অনেক নীচে নেমেছে।
করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ইতালী। মোট মৃত্যু ১ লাখ ২৪ হাজার ৮১০ জনের।
রাশিয়া রয়েছে ৭ম অবস্থানে।মোট মৃত্যু ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জনের।গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে মৃত্যু ৩৯৬ জনের।রাশিয়াও করোনা প্রতিরোধে নিজেদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।
ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে করোনায় এপর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩১৪ জনের।
জার্মানি ইউরোপের আরেক দেশ।করোনায় মোট মৃত্যু ৮৭ হাজার ৬৩৯ জনের।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে দশম অবস্থানে। মোট মৃত্যু ৮৩ হাজার ২৩৩ জনের।
একাদশতম স্থানে ইউরোপের দেশ স্পেন। মোট মৃত্যু ৭৯ হাজার ৬০১ জনের।
এশিয়ার দেশ ইরান রয়েছে এই তালিকার দ্বাদশতম অবস্থানে। মোট মৃত্যু ৭৭ হাজার ৯৯৪ জনের।
আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ।করোনায় মোট মৃত্যু ৭২ হাজার ৬৯৯ জনের।
ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে করোনায় এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু ৭২ হাজার ৫০০ জনের।
আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট মৃত্যু ৫৫ হাজার ৫৬৮ জনের।
এদিকে করোনা টিকা আবিষ্কার ও গত ছয়মাস আগে করোনার টিকা দেয়া শুরুর পর বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শো কোটিরও বেশি ডোজ শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ২২০টি দেশ ও অঞ্চলে অন্তত ১৫০ কোটি ১৭ হাজার ৩৩৭টি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।এএফপি’র হিসেবে থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তথ্যমতে, এর তিন পঞ্চমাংশই দেয়া হয়েছে চীন (৪২১.৯ মিলিয়ন), যুক্তরাষ্ট্র (২৭৪.৪ মিলিয়ন) এবং ভারতে (১৮৪.৪ মিলিয়ন।
জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ইসরাইলে। প্রতি ১০ ইসরাইলীর ছয়জনই টিকার দুটি ডোজই পেয়েছে।
২৭ সদস্যভুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ২০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এই ব্লকের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ টিকা পেয়ছে।
এদিকে বিশ্বের ১১টি দেশ এখনও টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এর ছয়টি আফ্রিকান দেশ। এসব দেশ হলো বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, শাদ, ইরিত্রিয়া ও তাঞ্জানিয়া। বাকী দেশগুলো হলো ভানুতু, কিরিবিতি, উত্তর কোরিয়া, তুর্কেমিনিস্তান ও হাইতি।