English

26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

৬ মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটেছে ঢাকা জেলায়

- Advertisements -

জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৭৬ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ২৪ নারী, আর এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬ জন। এ ছাড়া আর ৭২ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। মোটাদাগে এই হলো গত ছয় মাসের ধর্ষণের পরিসংখ্যান।

বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ছয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ৫ জুলাই। এবারই প্রথম জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছে তারা। সেই বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর নারায়ণগঞ্জে ৩৭টি, চট্টগ্রামে ২৭, গাজীপুর ২২ ও নোয়াখালী জেলায় ১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

আসকের পরিচালক (প্রোগ্রাম) নীনা গোস্বামী বলেন, ধর্ষণের সংখ্যা ঢাকা জেলায় কেন বেশি, তা নিয়ে আলাদা করে কোনো গবেষণা হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সংস্থাটি জেলা পর্যায়ের আলাদা পরিসংখ্যান বের করার চেষ্টা করেছে। সংবাদ প্রতিবেদন বেড়েছে বলে ঢাকা জেলা এগিয়ে কি না, তা নিয়ে আলাদা করে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মানুষ ঢাকামুখী। অন্য জেলায় ৬৪ জেলার মানুষ পাওয়া না গেলেও ঢাকায় পাওয়া যাবে। ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় জনসংখ্যা বেশি, জনবসতির ঘনত্বও বেশি। অপরাধীদের সংখ্যাও বেশি। তবে এটাও ঠিক, ঢাকা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নজরদারিও বেশি। গোয়েন্দা নজরদারি, টহল ও সিসিটিভি ক্যামেরার আওতা বাড়ানোসহ পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তাই অপরাধীরা অপরাধ করে পার পাবে না।

ধর্ষণসহ নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুরা ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) সমন্বিত সেবা পাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির তথ্য বলছে, ২১ জুলাই ওসিসিতে ধর্ষণের শিকার হয়ে ভর্তি ছিল নয়জন নারী ও শিশু। গত ছয় মাসে ওসিসিতে ভর্তি থাকা ৩৬৮ জনের মধ্যে ৩৪৮ জনই ধর্ষণের শিকার হয়ে ভর্তি ছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির প্রধান সমন্বয়কারী বিলকিস বেগম বলেন, ওসিসির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে বলা যায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে আসা নারী ও শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। বিলকিস বেগমের মতে, সচেতনতার কারণে ঢাকা জেলায় ঘটনা ঘটার পর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হচ্ছে বেশি। আইনি সহায়তাও বেশি নিচ্ছে ভুক্তভোগীরা।

ওসিসির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার তাঁর দীর্ঘদিনের আইন পেশার অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, প্রেম করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের পালিয়ে যাওয়ার পর অভিভাবকেরা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করছেন। বিয়ের প্রলোভনে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তা–ও বেশি পাওয়া যাচ্ছে ঢাকায়।

২০০৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি (এনএফডিপিএল)। ২০২০ সালে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধন করে। সংশোধিত আইনে ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী ব্যক্তির সম্মতি না থাকলেও ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এনএফডিপিএলের দেওয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ল্যাবের যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় ধর্ষণ মামলার সংগৃহীত নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়নি। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ঢাকা ওসিসি থেকে ১১১টি মামলা, সিলেট ওসিসি থেকে ৪০, চট্টগ্রাম ওসিসি থেকে ১০৬, রাজশাহী ওসিসি থেকে ২৫, বরিশাল ওসিসি থেকে ৩৩, খুলনা ওসিসি থেকে ৩০, রংপুর ও ফরিদপুর থেকে পাঁচটি করে মামলা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

সরকারের ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে অনেকে ধর্ষণের ঘটনা জানাচ্ছেন এবং সহায়তা চাচ্ছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশিক্ষক পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জানান, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ঢাকা মহানগর থেকে ধর্ষণ–সংক্রান্ত ৭৭টি আর ঢাকা জেলা থেকে ২৯টি ফোন এসেছে। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ঢাকা মহানগর থেকে ফোন এসেছে ১১৩টি, আর ঢাকা জেলা থেকে ৫৩টি। আনোয়ার সাত্তারের মতে, এ ধরনের পরিসংখ্যান থেকে এটা বলা যাবে না যে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বলা যায়, মানুষ সচেতন হচ্ছে বলেই ৯৯৯-এ কলের সংখ্যা বেড়েছে। তাই ঢাকা জেলায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে কি না জানতে হলে সংশ্লিষ্ট থানা বা জেলার মামলার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে আগে যেভাবে গোপন করা হতো, সেই প্রবণতা কমেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন বেশি হচ্ছে। ঢাকা জেলায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে, বিষয়টিকে এভাবে না দেখে দেখতে হবে, অপরাধটি কেন কমানো যাচ্ছে না। নীতিনির্ধারকদের সেদিকে নজর বাড়াতে হবে। ধর্ষণের মতো ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে প্রতিবেদন আরও বাড়বে। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা (ভিকটিম) তখন আরও বেশি মুখ খোলা শুরু করবে। তাই ভিকটিমদের জন্য সহায়তাপ্রাপ্তির জায়গা বাড়াতে হবে, এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একইভাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রতিরোধে সুস্থ মনমানসিকতা গঠনেও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন