English

16 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
- Advertisement -

হাসিনার ‘আয়নাঘর’: আটক ছিল শিশুরাও, ব্যবহার করা হতো জিজ্ঞাসাবাদে চাপ দিতে

- Advertisements -

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক বের হয়ে আসছে সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ নানা চিত্র।

এবার একটি তদন্তে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের আমলে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে শিশুদেরও গোপন কারাগারে আটক রাখা হতো। সেখানে চলত নির্যাতন, এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপ সৃষ্টির জন্য শিশুদের ব্যবহার করা হতো, যার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ পান করতে দিতে অস্বীকার করার ঘটনাও রয়েছে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি শত শত লোকের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও ছিল বলে জানিয়েছে বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে জোরপূর্বক গুমের তদন্তকারী একটি কমিশন। জোরপূর্বক গুমের তদন্তকারী এই কমিশন মঙ্গলবার তার প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছে, অন্তত অর্ধডজন শিশু তাদের মায়েদের সাথে মাসের পর মাস জেলের ভেতরে কাটিয়েছে। আটক রাখার সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুদের লিভারেজ হিসাবে অর্থাৎ মানসিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, যার মধ্যে তাদের দুধ পান করতে দিতে অস্বীকার করার ঘটনাও রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পা‌লিয়ে যান শেখ হা‌সিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইতোমধ্যেই হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শত শত নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আরও শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুমসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কমিশন বলেছে, নারীদের তাদের সন্তানসহ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনার বিশদ বিবরণ তাদের কাছে রয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ এই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। এছাড়া কমিশন এই বিষয়ে এক গর্ভবতী নারীর ঘটনাও উল্লেখ করেছে। গর্ভবতী ওই নারীকে তার দুটি ছোট বাচ্চাসহ আটকে রাখা হয়েছিল এবং সেই আটক কেন্দ্রে তাকে মারধরও করা হয়েছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”

‘কখনো ফিরে আসেনি’

কমিশন বলেছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের এমন একটি বন্দিস্থানের কক্ষটি দেখিয়েছেন যেখানে তাকে শিশুকালে তার মায়ের সাথে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আর এই আটক কেন্দ্রটি পরিচালনা করত আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। কমিশনের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “তার মা আর কখনোই ফিরে আসেননি।”

অন্য একটি ঘটনায় এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবাকে চাপ দেওয়ার জন্য “মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসাবে” শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।

অবশ্য ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনার সরকার জোরপূর্বক গুমের এসব ঘটনা অস্বীকার করত। সাবেক এই সরকার দাবি করেছিল, নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন। কমিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনোও নিখোঁজ রয়েছেন।

কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও তাদের জবানবন্দির মাধ্যমে সেই সব বাহিনীকে চিহ্নিত করা যাবে যারা এই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “এই ধরনের ক্ষেত্রে, আমরা কমান্ডারকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করব। ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর এসব ঘটনায় বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, আর সেটি গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।”

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন