মমতা ব্যানার্জি কলেজে পড়ার ফাঁকেই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, মাস গেলে বেতন জুটতো মাত্র ৬০ রুপি। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ায় সংসার চালাতে নিজের উপার্জিত সেই অর্থ মায়ের হাতে তুলে দিতেন। যিনি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে কাসারি পাড়া এলাকায় শীতলা মন্দির পূজা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই তথ্য সামনে আনেন মমতা।
তিনি বলেন, ‘এই পাড়া ছোটবেলা থেকে খুব প্রিয়। আমি এই পাড়ার প্রত্যেকটা রাস্তা চিনি, গলি চিনি। আমি যখন কলেজে পড়তাম, তখন দীর্ঘদিন এখানে একটি ছোট্ট স্কুলে শিক্ষকতা করতে আসতাম। সেসময় প্রায় বিনাপয়সায় বলতে পারেন মস্টারি করতাম। তখন মাত্র ৬০ রুপি বেতন পেতাম। সেই রুপি আমি আমার মায়ের হাতে তুলে দিতাম। কারণ, তখন বাবা মারা গিয়েছিলেন। কাজেই সেই স্কুলটি আমরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসেবে গড়ে তুলব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জমির ব্যাপারে শিক্ষা দপ্তর কাজকর্ম করছে বলে আমাকে জানিয়েছে।’
ভবানীপুরের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে মমতা বলেন, এখানে শুধু হিন্দু বা মুসলিম বা গুজরাটি, বা বিহারী নয়, এই ভবানীপুরে বৈশিষ্ট হলো সমস্ত ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় মিলে একসঙ্গে বসবাস করে। এই ভবানীপুরের সব ধরনের মানুষ পাওয়া যাবে। এইটুকু জায়গার মধ্যেই মা শীতলার মন্দির, মসজিদ এবং গুরুদুয়ারা আছে। কয়েক লাখ মানুষ এই অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের উৎসবে যোগ দেন। কোনো মানুষই কখনো দুঃখ নিয়ে যায় না।
ছোট বেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে দুর্গাপূজা দেখার কথাও জানাতে ভোলেননি মমতা।
মমতা আরও বলেন, ‘আমি যখন থেকে রাজনীতি শুরু করি… এই পাড়াতে আমাকে আসতেই হতো। কাজেই আমার রাজনীতির অনেকদিন কেটে গেছে এই পাড়াগুলোর মধ্য দিয়ে। নির্বাচনের সময় আমরা এখানে একটা নির্বাচনী সভা করেই থাকি। কারণ, যেকোনো বড় যুদ্ধের আগে এখানকার মাটি স্পর্শ করে যাই। মনের মধ্যেই মন্দির, মসজিদ, গির্জা কাজ করে। হৃদয়কে বড় করতে হবে মনটাকে ভালো করতে হবে। ভালো চিন্তা করুন, ভালো কথা বলুন, মন খুলে হাসুন, দেখবেন জীবন কত মধুর থাকবে।’
তার অভিমত প্রাণ খুলে হাসার জন্য লাফিং ক্লাবে যাওয়ার দরকার নেই, নিজের পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলুন, হাসুন, অফিসের কর্মী, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা বলুন, হাসুন দেখবেন সব ভালো থাকবে।
মমতা বলেন, ‘আমি সব ধর্ম মানি, আমি ঈদের সময় রোজা ভাঙ্গতে যেমন যাই, ইফতার পার্টিতে যাই, গুরু দরবারে হালুয়া চেয়ে খাই, তেমনি দুর্গাপূজাতে ভোগ খাই।’