শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জেরে দেশটির সাধারণ মানুষ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গত আটদিন ধরে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই আন্দোলন-সমাবেশে এবার তারা তিন বছর আগের বোমা হামলার বিচারের দাবি জানালো।
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোসহ কয়েকটি শহরের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মারা মান ২৬০ জনের বেশি মানুষ। আহত হন আরও পাঁচশো জনের মতো। নিহতদের মধ্যে ১৪টি দেশের ৪২ জন নাগরিকও ছিলেন। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশটিতে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা।
রোববার (১৭ এপ্রিল) কলম্বোতে শত শত বিক্ষোভকারী মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী স্বজনদের জন্য বিচার দাবি করেন তারা।
দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানির তীব্র সংকট, খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া ও হাসপাতালে ওষুধ সংকটসহ নানাবিধ কারণে শ্রীলঙ্কাজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি, দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হবে।
নিহতদের স্বজনসহ বিক্ষোভকারীরা বোমা হামলার বিচারের ব্যর্থতার জন্য তৎকালীন সরকারকে দায়ী করছেন। ‘ইটস বিন থ্রি ইয়ারস, উই ক্রাই ফর জাস্টিস’ এমন বাক্য সম্বলিত ব্যানার- প্ল্যাকার্ডও চোখে পড়ে সমাবেশে। এই হামলার পেছনে দায়ী কারা সেটাও খোলাসা করার দাবি তাদের।
হামলায় স্বজনহারাদের একজন শিরান অ্যান্টন। বোমা হামলায় মারা গেছেন তার স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা। তিনি বলছিলেন, আমার পরিবারে আর কেউ নেই। আজ খুব নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছি। আমার যন্ত্রণা ব্যাখ্যা করার মতো কোনা শব্দ আমার জানা নেই। হামলার তদন্তে সন্তুষ্ট নন উল্লেখ করে এই ভুক্তভোগী স্বজন আরও বলেন, আমি জানতে চাই এই হামলার পেছনে কে বা কারা দায়ী?
ওই হামলার জন্য কয়েক ডজন লোককে অভিযুক্ত করে দেশটির সরকার। তাদের মধ্যে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজনও ছিল। তাদেরকেই এই হামলার জন্য দায়ী করা হয়। জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা জানালেও হামলাকারীর নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি দেশটির তৎকালীন সরকার।
হামলার আগে ভারত দুবার শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করলেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এই ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকেই দায়ী করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তার দাবি, বিক্রমাসিংহের আমলেই শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থা দুর্বল হয়েছে।
কলম্বোর আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিত বলেন হামলার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে গেছে। নিরাপত্তা ইস্যুটি সামনে রেখে একের পর এক দেশ নাগরিকদের সতর্ক বার্তা দেন। ফলে এই হামলার কারণে ধসে পড়ে দেশটির পর্যটন খাত। অথচ দেশটির পর্যটন খাত হলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস।