English

21 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

হীরা পলিশের রাজধানীতে কর্মীরা ‘আত্মহত্যা’ করছেন কেন?

- Advertisements -

বিশ্বে হীরা পলিশ করার ‘রাজধানী’ পশ্চিম ভারতের সুরাটে পলিশকাজের কর্মী ছিলেন নিকুঞ্জ ট্যাংক। তিনি ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। নিকুঞ্জ তাঁর মা–বাবা, স্ত্রী-মেয়ের ভরণপোষণসহ যাবতীয় খরচ সামলাতেন। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর কোনো সঞ্চয় ছিল না। সাত বছর ধরে নিকুঞ্জ যে কারখানাটিতে (ইউনিট) কাজ করেছিলেন, তা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। একপর্যায়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। গত মে মাসে কাজ হারান নিকুঞ্জ। তিনিসহ তাঁর আরও অনেক সহকর্মী বেকার হয়ে পড়েন। এরপর অনেকটা মরিয়া হয়ে ওঠেন নিকুঞ্জ।

নিকুঞ্জর অবসরপ্রাপ্ত বাবা জয়ন্তী ট্যাংক বলেন, ‘সে (নিকুঞ্জ) চাকরি খুঁজে না পেয়ে, এই ধকল সইতে না পেরে চরম পথ বেছে নেয়।’ গত আগস্ট মাসে আত্মহত্যা করেন নিকুঞ্জ।

সুরাটের অবস্থান ভারতের গুজরাট রাজ্যে। সুরাটে পাঁচ হাজারের বেশি কারখানায় (ইউনিট) বিশ্বের ৯০ শতাংশ হীরা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সুরাটে আট লাখের বেশি কর্মী হীরা পলিশকারী হিসেবে কাজ করেন। শহরে ১৫টি বড় পলিশ কারখানা রয়েছে, যেগুলো বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যবসা (টার্নওভার) করে।

কয়েক বছর ধরে ভারতের মন্দা-আক্রান্ত হীরাশিল্পের জন্য একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। ভারতের কাটা ও পলিশ করা পাথরের (রত্ন) রপ্তানি ২০২২ সালে ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে তা কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে ১২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কম চাহিদা ও অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ২০২৩ সালে পলিশ করা হীরার দাম অনেক (২৭ শতাংশ পর্যন্ত) কমেছে।

সুরাটের স্টার রত্নের মহেশ ভিরানি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, অতিরিক্ত সরবরাহ ঘটেছে। কারণ, সীমিত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও চালু থাকার জন্য পলিশ কারখানাগুলো উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এটি তাদের লোকসান বাড়িয়েছে।

রাজ্যের ডায়মন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বিবিসি গুজরাটিকে জানায়, মন্দার কারণে শুধু গত ছয় মাসে ৩০ হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।

পলিশকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী এই ইউনিয়ন বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবার, পুলিশের নথি ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, এই মন্দার কারণে রাজ্যে গত দেড় বছরে ৬৫ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন।

তবে ইউনিয়নের এই পরিসংখ্যান বিবিসি অন্যত্র যাচাই করতে পারেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারিকালের লকডাউন, রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ও প্রধান প্রধান বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া ভারতের হীরাশিল্পে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ভারত তার অমসৃণ হীরার ৩০ শতাংশ রাশিয়ার খনি থেকে আমদানি করে। পরে সেগুলো কেটে পলিশ করে। এরপর বেশির ভাগই পশ্চিমা বাজারে বিক্রি করে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

গত মার্চ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার অমসৃণ (পলিশ করা নয়) হীরা আমদানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ভারতে প্রক্রিয়াজাত করা এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে তা পশ্চিমা দেশে বিক্রি করার বিষয়টিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে।

গুজরাট রাজ্যের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আইনপ্রণেতা কুমার কানানি বলেন, সুরাটের হীরা খাত একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চাকরি হারানোর কারণে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো পুলিশ তদন্ত করছে। কুমার কানানি আরও বলেন, সরকার পলিশকারী, ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

আত্মহত্যা করেছেন—এমন অন্তত নয়জন শ্রমিকের পরিবার বলেছে, তারা সরকারের কাছ থেকে সামান্যই সাহায্য পেয়েছে।

সুরাটে বেশির ভাগ বন্ধ হয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানাগুলো। এই কারখানাগুলো সাধারণত অমসৃণ হীরার গুণমান পরীক্ষা করা, তা পলিশ করা ও কাঙ্ক্ষিত আকার-আকৃতি দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে এই খাতের বড় ব্যবসায়ীদের ওপরও প্রভাব পড়েছে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন