১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাউই দ্বীপে টিমোথি ব্লেইজডেল নামে এক ব্যক্তি খুন হন। তাঁকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় হাওয়াইয়ের গর্ডন কর্দেইরোকে। তবে তিনি বরাবরই দাবি করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, তিনি হত্যাকারী নন। ৩০ বছর পর নির্দোষ হিসেবে মুক্তি পেয়ে গর্ডন কর্দেইরো বলেন, “আজ আমার ‘ফ্রিডম ফ্রাইডে’”।
টিমোথি হত্যার মামলায় গর্ডন কর্দেইরোকে হত্যা, ডাকাতি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে প্যারোলের সুযোগ ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ‘হাওয়াই ইনোসেন্স প্রজেক্ট’ তাঁর মামলা গ্রহণ করে এবং নতুন প্রমাণ, আগের আইনজীবীর অকার্যকর প্রতিরক্ষা এবং প্রসিকিউটরের দুর্নীতির বিষয়টি আদালতে তুলে ধরে।
হাওয়াই ইনোসেন্স প্রজেক্টের কো-ডিরেক্টর কেনেথ ল’সন বলেন, “এটি ছিল এক অত্যন্ত আবেগপূর্ণ মুহূর্ত। গর্ডন কাঁদছিলেন, আমরা সবাই কেঁদেছিলাম। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হবে… কিন্তু দুটি বিচারের পর তিনি বিচার ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। অবশেষে বিচারক বললেন, ‘আমি আপনার দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত বাতিল করছি।’ তখনই তাঁর মনে হলো, এটি সত্যিই ঘটছে।”
বিচারক ক্রিস্টিন হ্যামম্যান বলেন, “রায় ও শাস্তি বাতিল করা হলো এবং আসামিকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হলো।” এ সময় আদালতে উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কর্ডেইরোর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাখিল করা আদালতের নথি অনুযায়ী, তাঁকে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। পুলিশ যাঁদের তথ্যের ওপর নির্ভর করেছিল, তাঁরা মিথ্যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
আইনজীবীদের দাবি, হত্যার দিন তৎকালীন ২২ বছর বয়সী কর্দেইরো তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছিলেন এবং গ্যারেজে কাজ করছিলেন। হত্যাকাণ্ডের স্থান মাউইয়ের উপকণ্ঠের ‘স্কিড রো’ এলাকায় তিনি ছিলেন না।
আদালতের নথি অনুযায়ী, মাইকেল ফ্রেইটাস নামে এক ব্যক্তি ব্লেইজডেলের সঙ্গে স্কিড রো এলাকায় গিয়েছিলেন। ৮০০ ডলার দিয়ে এক পাউন্ড মারিজুয়ানা কেনার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। ব্লেইজডেলের মরদেহ পরে সেখানে একটি গহ্বরের নিচে পাওয়া যায়।
কর্ডেইরোর আইনজীবীরা জানান, ফ্রেইটাস বারবার নিজের বক্তব্য পাল্টেছিলেন এবং কর্দেইরোকে দোষারোপ করেছিলেন। তাঁদের বিশ্বাস, ফ্রেইটাস ব্লেইজডেলকে ডাকাতির জন্য ফাঁদে ফেলেছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে ফ্রেইটাস ২০২০ সালে মারা গেছেন।
কেনেথ ল’সন বলেন, “পুলিশ শুরু থেকেই এই মামলাটি ভুলভাবে পরিচালনা করেছে। প্রধান সন্দেহভাজনকে **প্রধান সাক্ষী বানানো হয়েছিল, যা গর্ডন এবং তাঁর পরিবারের জন্য ৩০ বছরের দীর্ঘ দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়।”
‘ফ্রিডম ফ্রাইডে’ উদযাপন
এখন কর্ডেইরোর বয়স ৫১ বছর। মুক্তির পর মাউই কমিউনিটি কারেকশনাল সেন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটি আমার ‘ফ্রিডম ফ্রাইডে’।”
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সমর্থকদের, বিচারক ও প্রসিকিউটরদের প্রতি, যাঁরা মামলার নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে সম্মতি দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর কারাগারে থাকার পর একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে জীবনযাপন কেমন হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে কর্দেইরো বলেন, “ভালোই হবে।