ভারতে আছে এক বিলিয়নের বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বে চীনের পরেই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির। মোবাইল ফোনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতে ইন্টারনেটের বিশাল বাজার স্থবির হয়ে গেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে দেশটির টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, মোট ৭৯ কোটি ভারতীয় মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০২১ সালেও ব্যবহারকারীর সংখ্যা একইরকম ছিল। এক বছরে ১০ লাখেরও কম ব্যবহারকারী বেড়েছে দেশটিতে। অথচ ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছরই কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে।
স্মার্টফোন হল অনলাইনে যাওয়ার প্রধান গেটওয়ে। কিন্তু এখানেই ব্যবহারকারী বৃদ্ধি থমকে গেছে। ভারতে বর্তমানে প্রায় ৬৫ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে।
এর একটি কারণ হতে পারে, কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকেই মোবাইলের দাম বেড়ে চলেছে। বিশ্বের সবথেকে বেশি স্মার্টফোন তৈরি করে চীন। রূপি দুর্বল হয়ে পড়ায় চীন থেকে স্মার্টফোন আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। ভারতেও কিছু কোম্পানি গড়ে উঠেছে কিন্তু তাদেরও ৯০ শতাংশের বেশি পার্টস চীন থেকেই আমদানি করতে হয়। এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে কোভিডের কারণে চাকরি হারানো। অর্থনীতি চাপে থাকায় মানুষের ব্যয়ও কমেছে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিকারকর্মী নিখিল পাহওয়াও। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির মন্থরতাকে অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সূচক হিসাবে দেখা উচিত।
একটি স্মার্টফোনের গড় দাম এখন প্রায় ২২ হাজার রূপি বা ২২০ ইউরো। যা দুই বছর আগে ছিল ১৫ হাজার রূপি। তবে ভারতীয়রা সাধারণত মোবাইলের পেছনে খুব বেশি অর্থ খরচ করতে পছন্দ করেন না। দেশটির বাজারে বিক্রি হওয়া ৮০ শতাংশ মোবাইলের দাম ২০ হাজার রূপির কম। এটিও একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন মার্কেট রিসার্চ ফার্ম আইডিসি’র কর্মকর্তা নবকেন্দার সিং। তিনি বলেন, এটি উদ্বেগের আসল কারণ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোনের বাজারে স্মার্টফোনের অনুপ্রবেশ থমকে গেছে। চীন থেকে বহু পেছনে পড়ে গেছে ভারত।
প্লাগ অ্যান্ড প্লে এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অনুজ গান্ধীর মতো কেউ কেউ ভাবছেন ভারতের স্মার্টফোন বাজার তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কিনা। তিনি বলেন, যখন অনেক মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে তখন আরও প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে আসবে! ভারতে ‘ডাম্বফোন’-এর ৩৫ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। এগুলো সাধারণত বেসিক হ্যান্ডসেট বা ফিচার ফোন। এর দাম গড়ে ১৫০০ রূপির মতো। এগুলোর দাম কম হওয়ায় দরিদ্ররা এসব ফিচার ফোন ব্যবহার করেন। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলেই কেবল তারা স্মার্টফোন কিনতে পারবেন।
কাউন্টারপয়েন্টের কর্মকর্তা তরুণ পাঠক বলেন, ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ডেটার উচ্চমূল্যের কারণে এই বৃদ্ধি কমে গেছে। ২০২২ সালে মাত্র ৩.৫ কোটি ভারতীয় ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোনে আপগ্রেড হয়েছে। অথচ কোভিড আঘাত হানার আগে প্রতি বছর ৬ কোটি মানুষ স্মার্টফোনে আপগ্রেড হতেন। ইন্টারনেট বৃদ্ধির মন্দা ভারতের জন্য ভালো খবর নয়। একটি স্মার্টফোন ছাড়া দেশটির নাগরিকদের জন্য সরকারী কল্যাণ সুবিধা, রেশন এবং ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য জিনিসগুলিতে অ্যাক্সেস করা কঠিন। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে যে ক্যাশলেস সেবা চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেটিও স্মার্টফোন ছাড়া সম্ভব নয়।
স্পষ্টতই ফোন এবং ইন্টারনেটের আরও বৃদ্ধির জন্য ভারতে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে। ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, স্মার্টফোন ব্যবহারে নারীরা পুরুষের থেকে পিছিয়ে আছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। আবার গ্রামগুলোতে একটি ডিভাইস পরিবারের একাধিক সদস্য ব্যবহার করে।
পাহওয়া বিশ্বাস করেন যে, শুধু ফোনের ক্রমবর্ধমান দামই ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখেনি। আরও একটি বড় সমস্যা হলো ভাষা। এখনও বেশিরভাগ মোবাইল অ্যাপ এবং পরিষেবাগুলিতে ভাষা ইংরেজি। ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে হিন্দি ও প্রধান কয়েকটি ভাষাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে অন্য ভাষার মানুষের জন্য ইন্টারনেট কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।