সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের শাসনের সময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত ৬ বছর সৌদি রাজ্যের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা এটি।
সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ ও ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলা সত্ত্বেও মৃত্যুদণ্ডের হার ঐতিহাসিকভাবে বেড়েছে দেশটিতে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সৌদি প্রিন্সের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব এবং ভিন্নমত দমন বেড়ে গেছে।
প্রিন্স মোহাম্মদ সালমান, গত ৬ বছরে দেশকে আরও আধুনিক করার প্রয়াসে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় মৃত্যু কার্যকরও বেশি অনুমোদন দেওয়া হয় তার সময়ে।
২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১২৯ শতাংশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় দেশটিতে। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের তুলনায় এই চিত্র ৮২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে। গত বছর ১৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল দেশটিতে।
গত বছরের ১২ মার্চে, একদিনে ৮১ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। সৌদি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ভিন্নমতের জন্য একটি সূক্ষ্ম বার্তা ছিল এটি, বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
ইউরোপীয় সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড রিপ্রাইভ, দুটি সংস্থার তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে. ‘সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন বৈষম্য ও অবিচারে ছেয়ে গেছে এবং সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর ব্যবহার সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে।’
মৃত্যুদণ্ড নিয়মিতভাবে ভিন্নমতাবলম্বী ও প্রতিবাদকারীদের নীরব করার জন্য ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও, প্রিন্সের প্রতিশ্রুতি ছিল মৃত্যুদণ্ড শুধু হত্যার জন্য ব্যবহার করা হবে। শুধু তাই নয় সুষ্ঠু বিচার লঙ্ঘন এবং শিশু নির্যাতনও বেড়ে গেছে দেশটিতে।
এই অঞ্চলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অন্যতম ধরা হয় সৌদিকে। ইরানও বেশি লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আসছে। গত ছয় বছরে শিশু, নারী ও বিদেশি নাগরিকদের মৃত্যুদন্ডের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে দেশটিতে। সেই সঙ্গে গণহত্যা ও বড় অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সম্প্রতি মাদকের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে সৌদিতে।
মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি কর্মক্ষেত্র ও সমাজজুড়ে ব্যাপক সংস্কার প্রবর্তন করেছেন। নারীদের কর্মসংস্থানে আরও বেশি প্রবেশাধিকার দিয়েছেন। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ছেন তিনি।