চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে পাকিস্তানে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরামর্শে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টে ভেঙে দিলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার পুনর্বহাল হয়। এরপর শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর গভীর রাতে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীরা। অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ায় রবিবারই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
এর আগে ইমরান অভিযোগ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে হঁটানোর জন্য বিরোধী দলগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে। আর বিরোধী দলগুলো নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির আশায় সেই ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে।
দেশটির এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই আবারও আলোচনায় ইমরান খানের তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এর আগে দাবি করা হয়, গদি ধরে রাখতে যতটা সক্রিয় ছিলেন ইমরান খান তার কিছু মাত্র কম ছিলেন না স্ত্রী বুশরা বিবি। বিরোধীরা বলছেন, স্বামীর গদি বাঁচাতে ‘কালোজাদু’ও বাদ দেননি বুশরা।
২০১৮ সালে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের ইমরান ও বুশরার বিয়ে হয়। বিয়ের আসর বসে বুশরার বান্ধবী ফারাহ খানের বাড়িতে।
সম্প্রতি বুশরার সেই বান্ধবী ফরাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ৯০ হাজার ডলারের হ্যান্ডব্যাগ হাতে নিয়ে বিমানে চড়ে দেশ ছেড়েছেন তিনি। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারাহ।
বুশরা ইমরানের তৃতীয় স্ত্রী। এর আগে ইমরান ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন ব্রিটিশ ফিল্ম, টিভি প্রযোজক জেমাইমা গ্লোডস্মিথকে। ২০১৪ সালে সাবেক এই পাকিস্তানি ক্রিকেট অধিনায়ক বিয়ে করেন ব্রিটিশ-পাকিস্তানি সংবাদিক রেহাম খানকে।
রেহামের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীনই ইমরান বুশরার প্রেমে পড়েন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম দাবি করেন, বিয়ের আগে তিন বছর ধরে বুশরার সঙ্গে ডেটিং করে করতেন ইমরান।
ইমরানও বুশরা বিবির প্রথম স্বামী নন। ১৯৮৯ সালে তিনি খাওয়ার মানেকা নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। মানেকা আবার বেনজির ভুট্টোর শাসনামলের এক মন্ত্রীর ছেলে। ২০১৭ সালে মানেকার সঙ্গে বুশরার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম বিবাহ সূত্রে বুশরার তিন কন্যা এবং দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
পাকিস্তানে বুশরা বিবির আরেক পরিচয় ‘পিঙ্কি পিরনি’ হিসেবে। তার দাবি, তিনি ‘অতিপ্রাকৃতের চর্চা’ করেন। তবে বিরোধী দলগুলোর মতে, তিনি আসলে ‘কালো জাদুর’ চর্চা করেন।
বুশরাকে বিয়ের আগেই পাকিস্তানের মসনদে বসেন ইমরান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, পিঙ্কি পিরানি নাকি আগেই বলে দিয়েছিলেন, তিনি পাকিস্তানের গদিতে বসতে চলেছেন।
তার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ার পর বুশরার প্রতিটি কথা মেনে চলতে শুরু করেন ইমরান খান। জানা যায়, বিয়ের পর দলে সমান্তরাল শাসন চালাতে শুরু করেন ইমরানের স্ত্রী। দলে তাকে ‘গডমাদার’ বলা হত। কানাডাবাসী পাকিস্তানি লেখক তারেক ফাতেহ একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বুশরা বিবি যা বলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন ইমরান।”
স্বামীর গদি বাঁচাতেও নাকি বুশরা লাগাতার চেষ্টা করে গিয়েছেন ‘কালো জাদুর’ মাধ্যমে।
বিরোধীদের দাবি, বাড়িতে একাধিক জীবন্ত মুরগি পুড়িয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, বাড়িতে কয়েক টন মুরগি পুড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতেও স্বামীর গদি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কোনও বিশেষ শক্তিকে জাগাতে গেলে জীবন্ত প্রাণী উৎসর্গের বিষয়টি অবশ্যই অতি প্রাচীন জাদু-বিশ্বাস। পিঙ্কি পিরনি কি সেই প্রাচীন বিদ্যা প্রয়োগ করে স্বামীর গদি বাঁচাতে তৎপর হয়েছিলেন?
সত্যি কি ‘কালোজাদু’ করেন ইমরান খানের স্ত্রী? সম্প্রতি বিরোধীদের এই ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রয়া দেখান তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী শাহবাজ গিল।
তিনি বিষয়টি ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, “তারা (পিএমএল-এন) কালোজাদুর অভিযোগ করে… পাকিস্তানে বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ বাস করে এবং তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা বিশ্বাস রয়েছে… এই ধরনের ইঙ্গিত ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত করার সমতুল্য।”
এসময় তিনি পিএমএল-এন সভাপতি শেহবাজ শরিফের সমালোচনা করে বলেন, “আপনি (শেহবাজ শরীফ) এমন ‘অযৌক্তিক এবং লজ্জাজনক’ অভিযোগ করেন কারণ আপনার বলার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। মনে রাখবেন কারও বিশ্বাসকে অসম্মান করার অধিকার আপনার নেই।”
তবে বুশরার ‘কালোজাদু’ ভিত্তি থাক বা না থাক, পাকিস্তানের মসনদ কিন্তু ঠিকই হারিয়েছেন ইমরান। মেয়াদ শেষ করার আগেই তাকে গদি ছাড়তে হয়েছে।