শিশুটির বয়স মাত্র ২৬ দিন। হার্টের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে সে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির ‘এমসে’ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন অভিভাবকদের।
এর পর আর বিলম্ব না করে নাগপুর থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে সন্তানকে নিয়ে এমসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু ট্রেনে ওঠার কিছু ক্ষণ পরই তাঁরা বুঝতে পারেন, ছেলের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সঙ্গে নেই।
বন্ধুর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সাহায্য চেয়ে পোস্ট দেন ওই দম্পতি। অক্সিজেন চেয়ে সেই বার্তা দেখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিলিন্ডার নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হন ভোপাল স্টেশনে। প্রাণে বেঁচে যায় শিশুটি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুটির স্বজনের আবেদন চোখে পড়ে অনেকের। সেই আবেদন উপেক্ষা করতে না পেরেই শুক্রবার রাত ২টা নাগাদ ভোপাল স্টেশনে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে উপস্থিত হন অনেকে।
তবে প্রয়োজনমাফিক তিনটি সিলিন্ডার নিয়েই রাজধানীর উদ্দেশে পাড়ি দেন ওই শিশুর অভিভাবকরা। এর পর সমস্ত ভোপালবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই অসুস্থ শিশুর মা নিকিতা সাহারে।
ওই নারী জানিয়েছেন, সন্তানের ভাল্ভে সমস্যা থাকায় নাগপুরের একজন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, দ্রুত এমসে ভর্তি করতে। অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এর পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সহায়তায় বৃহস্পতিবার বিলাসপুর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিট জোগাড় করেন তাঁরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নাগপুর থেকে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনে ওঠেন ওই দম্পতি। কিছুটা পথ পার হওয়ার পর নজরে আসে, তাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই।
বিষয়টি খতিয়ে দেখে নিকিতার স্বামী প্রবীণ তাঁর বন্ধু খসরু ইয়াসিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য চান। ভোপালের কিছু সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি ইইয়াসির সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই পরিবারের সাহায্যের আবেদনটি জানান।
রেলের কর্মকর্তাদেরও ট্যাগ করা হয় সেই পোস্টে। রেলের সাবেক বিভাগীয় প্রধান (ভোপাল) উদয় বরওয়ানকরের কাছেও সাহায্য চান ইয়াসির। উদয়ই আধঘণ্টার মধ্যে শিশুটির বাবা প্রবীণকে ফোন করে জানান ভোপাল স্টেশনে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রবীণ-নিকিতার আবেদন। সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গভীর রাতে ভোপাল স্টেশনে উপস্থিত হন।
রেল ও অর্থ দপ্তরের কর্মকর্তারাও ততক্ষণে পৌঁছে গেছেন স্টেশনে। রাত ২টা নাগাদ রাজধানী এক্সপ্রেস পৌঁছাতেই এত মানুষকে দেখে চমকে যান প্রবীণ-নিকিতা। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা।