ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর ইউরোপের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। এ জেরেই রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ফিনল্যান্ডের সাধারণ জনগণ রাশিয়ার হামলার ভয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে ১৩শ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত থাকা ফিনল্যান্ড এত দিন সামরিকভাবে নিরপেক্ষতার নীতি মেনে আসছিল। ৫৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সেনার সংখ্যা মাত্র ১৩ হাজার। তবে দেশটিতে ৯ লাখ মানুষ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে যুদ্ধের কাজে সরাসরি ব্যবহার করা যাবে।
তবে ফিনল্যান্ডবাসীর মন থেকে এসব পরিসংখ্যান রুশভীতি দূর করতে পারছে না। তাই তারা সপ্তাহান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোয় ভিড় করছেন।
দেশটির সান্তাহামিনা দ্বীপের বাসিন্দা ভিলে মুক্কা এএফপিকে তিনি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত ভয় বেড়েছে। সবাই নিজের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। এ জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অনেকেই।
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। সামরিক ইউনিফর্ম ও হেলমেট পরে অংশগ্রহণকারীরা সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া, বিস্ফোরক শনাক্ত ও যুদ্ধের সময় জঙ্গলে চলাচলের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ফিনল্যান্ডের ন্যাশনাল ডিফেন্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশনের (এমপিকে) সংগঠক ওসি হিয়েতালা জানিয়েছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পরের সপ্তাহ থেকে এসব প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের হার ১০ গুণ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, অন্য সময়ে প্রতি সপ্তাহে ৬০০ মানুষ এসব প্রশিক্ষণে অংশ নিতেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এ সংখ্যা ছয় হাজারে উন্নীত হয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ফিনল্যান্ডের দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলা এসব লড়াইয়ে শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশটির কাছে ফিনল্যান্ড অনেক ভূমি হারিয়েছে। তাই সোভিয়েত উত্তরসূরি রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার ভয়ে ন্যাটোয় যোগ দেওয়া, জনগণের স্বেচ্ছায় সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়াসহ নানা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ফিনল্যান্ডে।
সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৪৩ বছরের টুমাস ভ্যারে বলেন, ভীতিকর অভিজ্ঞতা খুঁজতে খুব বেশি অতীতে যেতে হবে না। গত শতকের মাঝামাঝিতেই আমরা ভুগেছি। এ ভীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক প্রশিক্ষণে আমি আরও সক্রিয় হয়েছি।