গত ৬০ বছর ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিয়েছেন জেমস হ্যারিসন। তার দেয়া রক্তের জন্যই জীবন বেঁচেছে ২৪ লাখের বেশি শিশুর। এই কাজের জন্য তিনি খন পরিচিত ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম’ নামে। এবার সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন জেমস।আজ সোমবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি নার্সিং হোমে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় জেমসের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
জেমস হ্যারিসনের রক্ত অনন্য। বিশেষ কিছু অ্যান্টিবডির উপস্থিতিই তার রক্তকে করেছে বিশেষ। তার রক্তে থাকা রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি হয় ‘অ্যান্টি-ডি’ নামের এক ধরনের ইনজেকশন। যা রিসাস রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইউকে-এর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, রিসাস রোগ এমন একটি অবস্থা যার জেরে গর্ভবতী মহিলার রক্তে থাকা অ্যান্টিবডি শিশু শরীরের রক্ত কণিকাকে ধ্বংস করে। যার জেরে শিশুর মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। সেই রোগ আটকানোর ইনজেকশন তৈরিতেই বিশেষ ভূমিকা রেখেছে হ্যারিসনের রক্ত।
রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস জানায়, অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ জনেরও কম মানুষের রক্তে এ ধরনের অ্যান্টি বডি আছে। এ ধরনের রক্তের প্রতিটি ব্যাগ অনেক মূল্যবান। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার ১৭ শতাংশেরও বেশি গর্ভবতী নারীর মধ্যে রিসাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। সুতরাং জেমস ৬০ বছরে অনেক জীবন বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন।
১৯৩৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হ্যারিসন। তার বয়স যখন ১৪ বছর; তখন থেকেই রক্তদানের নেশা তার মধ্যে চেপে বসে। তখন তার বুকে বড় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। অন্য মানুষের রক্তে সুস্থ হয়ে ওঠেন হ্যারিসন। তাই তিনি রক্তদাতা হওয়ার প্রতিশ্রুতি নেন। এরপর থেকে তিনি ১ হাজার ১৭৩ বার রক্ত দিয়েছেন। ৬০ বছর ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিয়েছেন জেমস। চিকিৎসকরা জেমসের রক্ত থেকে প্লাজমা বের করে নিতেন। তার পর লাল রক্ত কণিকা ফিরিয়ে দেয়া হত তার শরীরে। এই পদ্ধতি ব্যবহারের জন্যই এত দিন ধরে বিপন্ন শিশুদের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজের রক্ত দিতে পেরেছেন জেমস।