মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, আইএসের শীর্ষ নেতা আবু ইব্রাহিম আল কুরাইশিকে হত্যা করার জন্য বেশ কয়েকমাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তারপর নাটকীয়ভাবে অনেকটা আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন হত্যা অভিযানের কায়দায় মিশন চালানো হয়। তবে কুরাইশি ধরা না দিয়ে সপরিবারে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন।
সিরিয়ার উত্তর ইদলিব প্রদেশের আতমেহ শহরের উপকণ্ঠে একটি তিনতলা আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে ওই অভিযান চালানো হয়।শহরটি তুরস্ক সীমান্তবর্তী ও বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত। উত্তর ইদলিব অঞ্চলটি আইএসের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী জিহাদি সংগঠনগুলোর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। সেইসাথে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী দলগুলোও সেখানে শক্তিশালী।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নিশ্চিত তথ্য ছিল যে কুরাইশি আতমেহ শহরের আবাসিক ভবনটির দোতলায় পরিবারের সঙ্গে বাস করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বার্তাবাহকের মাধ্যমে সিরিয়া এবং অন্যত্র তার নির্দেশনা প্রচার করে আইএস চালাতেন।
‘দ্য ডেস্ট্রয়ার (ধ্বংসকারী)’ নামে পরিচিত কুরাইশি তার পূর্বসূরি আবু বকর আল-বাগদাদির মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে আইএস এর নেতা হয়েছিলেন। তিনি হাজি আবদুল্লাহ এবং আমির মোহাম্মদ সাইদ আবদুল রহমান আল-মাওলা ও আবদুল্লাহ কারদাশ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
আইএস বাগদাদির মৃত্যুর চার দিন পরে তার নেতৃত্বে বসার কথা ঘোষণা করলেও, কুরাইশিকে এই ভূমিকার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। সংগঠনের ভবিষ্যত দায়িত্ব গ্রহণের প্রত্যাশায় তাকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে রাখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
আতমেহর ওই বাড়িতে থাকার সময় কুরাইশ ছাদে গোসল করা ছাড়া কখনও বাইরে যাননি। সেখানে বিমান হামলায় বেসামরিক হতাহতের উচ্চঝুঁকি ছিল। কারণ অন্য একটি পরিবার নিচতলায় থাকত। ধারণা করা হয়, তারা আইএসের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং কুরাইশির উপস্থিতি সম্পর্কে অবগতও ছিল না।
কুরাইশিকে ধরিয়ে দেওয়ার তথ্য দিতে মার্কিন কর্মকর্তারা এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।
মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, কুরাইশির বাড়িতে সম্ভাব্য স্থল অভিযান বিশদভাবে যাচাই করা হয়েছিল। সম্ভাব্য বারো ধরনের পরিস্থিতিতে কী হতে পারে তা অনুশীলন করা হয়। আবাসিক কম্পাউন্ডের বিভিন্ন মডেল তৈরি করা হয়েছিল। কর্মকর্তাদের দাবি, প্রকৌশলীরা বিস্ফোরণে পুরো ভবনটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার স্পেশাল ফোর্সের ওই অভিযানের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। হোয়াইট হাউজের ‘সিচুয়েশন রুম’ থেকে সরাসরি তিনি ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন।
অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কুরাইশি বাড়ির তৃতীয় তলায় একটি বিস্ফোরক ফাটিয়ে স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, তাকে পরে ‘আঙুলের ছাপ এবং ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে’ শনাক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, অভিযানে তাদের পক্ষে কোনো হতাহত হয়নি। তবে একটি হেলিকপ্টার অভিযানের সময় বিগড়ে যাওয়ায় তা ধ্বংস করতে হয়।
আবু বকর আল-বাগদাদিও মার্কিন বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার পর কুরাইশির মতো নিজেকে বোমার ঘায়ে উড়িয়ে দেওয়ার কৌশল ব্যবহার করেছিলেন।
আতমেহ থেকে কাছেই অবস্থিত একটি গোপন আস্তানায় মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় বাগদাদি একটি বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিন শিশুসহ আত্মহত্যা করেছিলেন।