যুক্তরাষ্ট্রে গত দুই সপ্তাহে বন্দুক হামলায় ৩৭ জন নিহত হয়েছে। দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে বন্দুক হামলার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল দেশটির ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের টিউলসা শহরের একটি হাসপাতালে বন্দুকধারীর হামলায় চারজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, স্থানীয় সময় বুধবার (১ জুন) টিউলসার সেন্ট ফ্রান্সিস হাসপাতালে রাইফেল নিয়ে হামলা চালায় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি। স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটে পুলিশ ওই হামলার ঘটনার বিষয়টি জানতে পারে এবং তারা ৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে ওই হামলার কারণ সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। টিউলসা পুলিশের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে পুলিশ এখনও তল্লাশি চালাচ্ছে।
এর আগে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে গত মঙ্গলবার (৩১ মে) একটি হাইস্কুলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গুলিতে এক নারী নিহত এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হন। নিউ অরলিন্সের জেভিয়ার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে মরিস জেফ কমিউনিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
তার আগে দেশটির টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে গত ২৪ মে একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ২১ জন নিহত হন। এদের মধ্যে ১৯ জনই শিশু। দেশটির মেক্সিকো সীমান্তবর্তী উভালদে এলাকার একটি এলিমেন্টারি স্কুলে এ ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে গত ১৪ মে নিউইয়র্কে একটি মুদি দোকানে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে ১৮ বছরের এক কিশোর। নিজেকে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ঘোষণা দিয়ে আফ্রিকান-আমেরিকান অধ্যুষিত এলাকাটিতে হামলা চালায় সে। এর একদিন পরেই ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি চার্চের দরজায় দাঁড়িয়ে নির্বিচারে গুলি চালায় এক বন্দুকধারী। এতে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বন্দুক হামলা। প্রায়ই দেশটির কোনো না কোনো অঙ্গরাজ্যে নৃশংস বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে। যা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬১টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি। এফবিআইয়ের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানায়, গত বছর ৩০টি অঙ্গরাজ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ১০৩ জন ও আহত হন ১৪০ জন।
২০২০ সালে ১৯ অঙ্গরাজ্যে ৪০টি বন্দুক হামলা হয়। এতে নিহত হয় ৩৮ জন ও আহত হয় ১২৬ জন। যদিও এসময় করোনার মহামারির কারণে লকডাউনের মতো কঠোর করোনা বিধিনিষেধ জারি ছিল। ২০১৭ সালে এ ধরনের ৩১টি ঘটনা ঘটে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৩০টি করে হামলা রেকর্ড করা হয়।
২০১৭ সালের ৩১টি ঘটনায় রেকর্ড ১৪৩ জন প্রাণ হারান ও আহত হয় ৫৯১ জন। সে সময় নেভেদার লাস ভেগাসে হামলায় বহু হতাহত হয়। হোটেল রুম থেকে একজন বন্দুকধারীর হামলায় ওই ঘটনায় মারা যান ৬০ জন ও আহত হন ৪১১ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত বন্দুক হামলা ও তাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সেখানে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন এখনো কঠোর করা যায়নি। মার্কিন কংগ্রেসে এ বিষয়ে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কারও না কারও কাছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বন্দুক রয়েছে। ২০২০ সালে আমেরিকায় ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত আঘাতের কারণে মারা গেছে। গাড়ির দুর্ঘটনায় যত তরুণ মারা যায় তার চেয়ে বেশি নিহত হচ্ছে বন্দুক হামলায়।