প্রথমে বলা হয়েছিল, অভিষেক একাই এই যাত্রা করবেন। তারপর সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর যোগদান এবং পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমপ্রধান দুই জেলায় ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে মমতার এই যৌথ সভা-সমাবেশ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী কি তার সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক বাঁচাতে মরিয়া?
গত বিধানসভায় মমতা রাজ্যের মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পেয়েছিলেন। কংগ্রেস-বামদের থেকে মুখ ফিরিয়ে সংখ্যালঘু ভোটদাতারা যে পুরোপুরি তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে ভোট বিশেষজ্ঞরা একমত। সে জন্যই বিধানসভায় একটা আসনও পায়নি বাম-কংগ্রেস। শুধু জোটের প্রার্থী হিসেবে নওয়াজ সিদ্দিকি জিতেছিলেন।
পরিস্থিতি একই থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এভাবে ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে যৌথ সভা করতে হতো না বলে মনে করেন বিরোধী নেতারা। কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বাম সমর্থিত কংগ্রেসের প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন। তার পরই তৃণমূল যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছে। কারণ সাগরদিঘিতে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৪৭ শতাংশের বেশি ভোট, আর তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ। ফলে মুসলিম ভোট কোনদিকে গেছে, তা স্পষ্ট।
এই ফলাফলের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, মুসলিমরা বুঝতে পেরেছেন, মমতা তাদের ঠকিয়েছেন। তাই তারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, মুসলিম ভোট তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের দিকে যাওয়ায় এই ফল হয়েছে।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে যারা পুরোপুরি তৃণমূলকে সমর্থন করলেন, বছর দেড়েকের মধ্যেই তাদের অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর দলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার কংগ্রসকে সমর্থন করলেন কেন?
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেন, ‘বিধানসভার সময় পরিস্থিতি আলাদা ছিল। তখন বিজেপিকে হারানোর প্রশ্নটা বড় ছিল। তাই মুসলিম ভোট ওদিকেই গিয়েছিল। তারপর যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে, আনিস খানের হত্যার প্রসঙ্গ এসেছে, কালিয়াগঞ্জের মতো ঘটনা ঘটেছে, তাতে মুসলিমদের কিছুটা মোহভঙ্গ হওয়া স্বাভাবিক। সামনে লোকসভা নির্বাচন। সেখানে লড়াইটা মূলত মোদি বনাম কংগ্রেস হওয়ার কথা। তাই মমতা মুসলিম ভোট হাতছাড়া হওয়ার ভয় পেতেই পারেন।’
সাগরদিঘির ফলাফলের পর রাজ্যের পাঁচজন সংখ্যালঘু মন্ত্রীকে তা বিশ্লেষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। মন্ত্রীদের কমিটি বলেছে, হারের মূল কারণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। লোকসভা ভোটে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মতো দুই জেলায় অধিকাংশ আসনে জিততে চান মমতা। আবার বেশ কিছুদিন হলো, অধীর চৌধুরী মুর্শিদাবাদের মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দলকে সংগঠিত করছেন। আবার কংগ্রেস যাতে এই জেলায় জয়ের পথে ফিরতে পারে তার চেষ্টা করছেন। মালদহেও একই চেষ্টা করছেন অধীর ও গনি খান চৌধুরীর আত্মীয়রা।
তাই কি এখন থেকেই মুসলিম ভোট সংগঠিত করে দলের দিকে ফেরাতে মরিয়া চেষ্টা করছেন মমতা?