বর্তমানে এশিয়ার শীর্ষ ধনী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মুকেশ আম্বানি। ২২ হাজার কোটি ডলারের সাম্রাজ্য তার।
শত শত কোটি ডলার সম্পদের মালিকানা এখন যাবে মুকেশ আম্বানির তিন সন্তানের হাতে। এরা হচ্ছেন ইশা ও আকাশ আর অনন্ত। ইশা ও আকাশের বয়স এখন ৩১, আর অনন্তের বয়স ২৮। ইশা ও আকাশ যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন সাপেক্ষে তারা পরিচালকমণ্ডলীতে যোগ দেবেন।
মুকেশ আম্বানি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রিলায়েন্সে পুরোনো নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুন নেতৃত্বের উচ্চাভিলাষ যোগ হবে। এর ফলে এই কোম্পানিতে তৃতীয় প্রজন্মের পারিবারিক নেতৃত্বের সূচনা ঘটবে।
তেল, টেলিকম, কেমিক্যালস, প্রযুক্তি, ফ্যাশন থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যসহ বহু দিকে বিস্তৃত রিলায়েন্সের ব্যবসা। বৈশ্বিক ফার্মের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সাধারণ বীমা ও স্বাস্থ্য বীমার ব্যবসায় প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। এ ছাড়া প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাত নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে এই গ্রুপের।
উত্তরাধিকারসংক্রান্ত একটি উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সন্দীপ নার্লেকার বলছেন, মুকেশ আম্বানি এবং তার স্ত্রী নীতা অনেক বছর ধরেই সন্তানদের এ মুহূর্তটির জন্য তৈরি করছিলেন। তারা শুধু মুকেশ আম্বানির সন্তান বলেই উত্তরাধিকারী হচ্ছেন তা নয়, বরং এর পেছনে ভেবেচিন্তে নেওয়া কৌশল এবং পরিকল্পনা কাজ করেছে। তারা যেখানে ভালো করবেন তা চিহ্নিত করেই ব্যবসার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মুকেশ আম্বানিসহ পুরো পরিবারটিই তাদের বিলাসবহুল জীবন, বিয়ের অনুষ্ঠান ও বাসভবনের জন্য খরচের কারণে মিডিয়ার নজরে থাকেন। এ জন্য তার ছেলে-মেয়েদের ওপর মিডিয়ার নজর হয়তো আরও বাড়বে। তবে তারা জানেন কী করছেন এবং তাদের ভালোভাবেই তৈরি করা হয়েছে।
আকাশ আম্বানি কলেজে পড়া শেষ করার পর ২০১৪ সালে রিলায়েন্স গ্রুপের টেলিকম ইউনিট রিলায়েন্স জিওর লিডারশিপ টিমে যোগ দেন। তিনি এখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ধনী ক্রিকেট দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন।
অন্যদিকে ইশা আম্বানিকে তাদের কোম্পানির রিটেইল, ই-কমার্স ও লাক্সারিসংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলোকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, ফ্যাশনের ক্ষেত্রে ই-কমার্সের মাধ্যমে এই ফার্মের ক্রম-প্রসারমান উপস্থিতি, শীর্ষস্থানীয় কিছু আন্তর্জাতিক বিলাসদ্রব্যের ব্র্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারিত্বের পেছনেও তিনি আছেন।
রিলায়েন্সর প্রধান ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ইশার এ উত্থান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাকে সিনিয়র নেতৃত্বের ভূমিকা দেওয়া হয়েছে, যেখানে এ পরিবারের অন্য নারীরা এতদিন পর্যন্ত এত বড় ভূমিকা পাননি। ২০২১ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন তাকে ‘এয়ারেস অন-ডিউটি’ বলে আখ্যায়িত করে এবং ভারতের ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ২১ নম্বরে স্থান দেয়।
মুকেশ আম্বানি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অনেক সময়ই ব্যবসার ধরন নিয়েও তার মেয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত জড়িত আছেন রিলায়েন্সের জ্বালানিসংক্রান্ত ব্যবসায়। এরমধ্যে আছে ফসিলজাত জ্বালানি থেকে শুরু করে সৌরশক্তি প্যানেল তৈরির ব্যবসাও।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট অনন্ত তার মায়ের সঙ্গে রিলায়েন্স চ্যারিটির বোর্ডে আছেন। আইপিএলে তাদের দলের ক্রিকেট খেলাতেও গ্যালারিতে দেখা যায়।
মুকেশ আম্বানি এবং তার ভাই অনিল আম্বানির মধ্যে ২০০২ সালে তাদের পিতার মৃত্যুর পর ব্যবসার উত্তরাধিকার নিয়ে যে তিক্ত বিবাদ হয়েছিল তা অনেকেরই হয়তো মনে আছে। সম্পদ ভাগাভাগি করার কোনো উইল না থাকায় শেষ পর্যন্ত তাদের মায়ের হস্তক্ষেপে এই বিবাদের রফা হয়েছিল।
মুকেশ আম্বানি বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য তিনিই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকবেন এবং রিলায়েন্সের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বকে গড়ে তুলবেন। তার ছেলে-মেয়েরা যেন সমন্বিতভাবে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রুপকে আরও ওপরে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাদের তৈরি করবেন।