মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বৈশ্বিক স্বীকৃতি ঠেকাতে মিত্র দেশগুলোসহ বিশ্বসম্প্রদায়কে নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি দেশটি মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলেট গত বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইট বার্তায় মিয়ানমারের প্রবাসী সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমি বার্মার (মিয়ানমারের) গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।
মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে ফেরানো নিশ্চিত করতে নৃগোষ্ঠীগুলোসহ বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া অপরিহার্য। ’
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে এমন সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন ডেরেক শোলেট। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী লড়াই তীব্র হয়েছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা ডেরেক শোলেট গত বৃহস্পতিবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি মিয়ানমারের জান্তাকে স্বীকৃতি না দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি জান্তা আয়োজিত কোনো নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়কে আহ্বান জানান।
ডেরেক শোলেট বলেন, মিয়ানমারের জান্তার ওপর আরো চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব আনার চেষ্টা করছে। ওই উদ্যোগ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে চীনের কারণে ওই প্রস্তাব নিয়ে কত দূর অগ্রসর হওয়া যাবে, তা নিয়ে তাদের শঙ্কা আছে। সব বাস্তবতা আমলে নিয়েই জান্তার স্বীকৃতি ঠেকানো এবং আরো চাপ সৃষ্টির ওপর তিনি জোর দিয়েছেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর জাতিসংঘে ওই দেশের রাষ্ট্রদূত জান্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এনইউজি নিজেকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে দাবি করে তাদের মনোনীত রাষ্ট্রদূতকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায় জাতিসংঘকে। অন্যদিকে জান্তা কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘে নতুন রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন দিলেও ক্রেডেনশিয়াল কমিটি এখনো তা অনুমোদন দেয়নি। এর ফলে জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত পদ নিয়ে জটিলতা কাটেনি।
উল্লেখ্য, জান্তা কর্তৃপক্ষকে মিয়ানমারের সরকার হিসেবে কার্যত কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি। চীন ও রাশিয়া জান্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এরই মধ্যে উচ্চ সফর বিনিময়ও হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানায়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ মিয়ানমারের ভেতরে ও বাইরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য আরো ১৭ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে ওই সহায়তার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নতুন এই আর্থিক সহায়তার মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তার পরিমাণ ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারে (প্রায় এক হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা) উন্নীত হয়েছে। নতুন সহায়তার মধ্যে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নির্মূলের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দেওয়া প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ স্থায়ী বাসিন্দার জীবনমানের টেকসই উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ‘আমরা মানবিক কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং মিয়ানমারের সহিংসতার কারণে বিপদগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সহায়তা বাড়াতে অন্য দাতাদেরও অনুরোধ করছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর উদারতার প্রশংসা করে। আমরা মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে বাস্তুচ্যুতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে ফিরে
যাওয়া এবং পুনরেকত্রীকরণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে বাংলাদেশ সরকার, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থাকা জনগণের সঙ্গে কাজ করছি। ’