কেয়ামতের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য আছড়ে পড়ল নাসার আত্মঘাতী মহাকাশযান। সোমবার ফুটবল স্টেডিয়ামের আকারের একটি গ্রহাণুর সাথে নাসার বহু মিলিয়ন ডলারের মহাকাশযান মুখোমুখি হয়েছিল। নাসার আত্মঘাতী এই মহাকাশযান সফলভাবে পৃথিবী থেকে ৬.৮ মিটার দূরের গ্রহাণুকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে সফলভাবে এই আত্মঘাতী অভিযান সম্পন্ন করল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নাসা ডার্ট মিশন’।
১৫ হাজার মাইল বেগে ধেয়ে আসা মহাকাশযানটির সঙ্গে গ্রহাণুর সংঘর্ষ হয়। লাইভ-স্ট্রিম করা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে মহাকাশযানটি আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রহাণুটি টুকরো বিটুকরো হয়ে যায়। মিশন সফল হওয়ায় কন্ট্রোল রুমে মহাকাশ গবেষকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। নাসা এবং জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দল একে অপরকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানান। ১০ মাস আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এই বিশেষ আত্মঘাতী অভিযানের জন্য ডার্ট স্পেশক্রাফ্টকে মহাকাশে পাঠানো হয়।
একটি অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে নাসার গ্রহ বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক লরি গ্লেজ জানিয়েছেন – “মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা হল। পৃথিবীর কক্ষপথে গ্রহাণু আছড়ে পড়ার বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করার যোগ্য়তা অর্জন করলাম আমরা”। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের গবেষক স্যামসন রেওনি বলেছেন -” মহাকাশে খেলাটাই বদলে গেলো। এটি একটি ম্যাজিক মোমেন্ট। আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানকে মহৎ উদ্দেশে ব্যবহার করা হলো ”।
প্রায়শই পৃথিবীর অত্যন্ত কাছ দিয়ে উড়ে যায় বিভিন্ন মাপের গ্রহাণু। ছোটগুলিকে নিয়ে চিন্তা নেই, কিন্তু তার আকার বড় হলেই মুশকিল। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে গোটা মানব সভ্যতা। যেভাবে অবলুপ্তি ঘটেছিল ডাইনোসরদের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মহাজগতের গ্রহাণু ডাইমরফাস আয়তনে প্রায় ৫৩০ ফুট। মিশরের বৃহদাকার পিরামিডের সঙ্গে তার তুলনা করা হয়েছে। কোনওক্রমে পৃথিবীতে তা আছড়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেস থেকে স্পেসএক্স সংস্থার ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশযানটি যাত্রা শুরু করেছিল। প্রায় নয় মাস পর এটি পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের মাঝে অবস্থিত ‘ডিডাইমোস’ গ্রহাণুর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তবে, ৭৪৯ মিটার ব্যাসার্ধের ‘ডিডাইমোস’ গ্রহাণুটি নাসার লক্ষ্য ছিল না। ডিডাইমোসকে প্রদক্ষিণকারী আরও একটি ছোট আকারের গ্রহাণু ডাইমরফাসের গায়েই ১৫,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে আঘাত করে ডার্ট মহাকাশযান।
ইচ্ছাকৃত এবং সুপরিকল্পিতভাবে মহাকাশযানটিকে ডাইমরফাসের উপর আছড়ে ফেলেছে নাসা। এই পরীক্ষাটি আগামী শতকে বিজ্ঞানীদের আরও অনেকটা প্রস্তুত করে ফেলল। আগামীদিনে যদি এমনই কোনও গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে তার থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এই সফল প্রচেষ্টাকে বলা যেতে পারে বিজ্ঞানের একটা যুগান্তকারী অভিযান।