এরই মধ্যে কেটে গেছে ৬০ ঘণ্টারও বেশি সময়। এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ভারতের মধ্যপ্রদেশে ৪০০ ফুট গভীর কূপে পড়ে যাওয়া আট বছরের শিশু তন্ময় সাহুকে।
গত ৬ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের বেটুলে একটি ফাঁকা জায়গায় খেলতে খেলতে গভীর কূপে পড়ে যায় শিশুটি। তাকে উদ্ধার করার জন্য তড়িঘড়ি এসে পৌঁছে পুলিশ।
সঙ্গে ছিলেন দমকল এবং আধা সেনার কর্মকর্তারা।
তন্ময়কে উদ্ধার করতে পাশেই আলাদা একটি কূপ খনন করা হচ্ছে। কিন্তু বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, পাথুরে মাটি থাকার কারণে দ্রুত খননকাজ চালানো যাচ্ছে না। খননকাজের গতি বাড়ানোর জন্য বিশেষ যন্ত্র আনা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩ ফুট গর্ত খোঁড়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলাশাসক।
একই সঙ্গে জেলাশাসক জানিয়েছেন, তারা দ্রুত ওই শিশুটির কাছে পৌঁছতে চান। তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা হলো, ৪৫ ফুট পর্যন্ত খননকাজ চালিয়ে পাথুরে আস্তরণ সরিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফেলা। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার মতো নরম মাটির স্তর না পাওয়া গেলে উদ্ধারকাজে বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তবে আট বছরের তন্ময় এখনো জীবিত আছে। ওপর থেকেই তার রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার মাপা হচ্ছে। কিন্তু আতঙ্কে বা অন্য কোনো কারণে সে সম্প্রতি অজ্ঞান হয়ে গেছে। ওপর থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বার্তা পাঠালে তার দিক থেকে কোনো সাড়া আসছে না।
তবে খাবার, খেলনাসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখার চেষ্টা চলছে। বেটুলের অতিরিক্ত জেলা শাসক শ্যামেন্দ্র জয়সওয়াস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে একটানা উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে।
শিশুটির বাবা সুনীল সাহু জানিয়েছেন, গত ৬ ডিসেম্বর তার ছেলে অন্য একটি মাঠে খেলতে চলে গিয়েছিল। সেখানে খোলা কূপ আছে, সে খেয়াল করেনি। খেলতে খেলতেই ঘটে যায় এই বিপর্যয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধারকাজে তদারকি করছেন।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। শিশুটিকে সুস্থভাবে উদ্ধার করার জন্য জেলা প্রশাসনকে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অরক্ষিত কূপে পড়ে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। আগেও বহুবার খেলতে খেলতে শিশুরা এমন কূপে পড়ে গেছে। যাদের মধ্যে অনেককেই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যায়নি।
২০০৬ সালে ৬০ ফুট গভীর কূপে পড়ে গিয়েছিল হরিয়ানার প্রিন্সকুমার কাশ্যপ। সে সময় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল ভারতের সংবাদমাধ্যম। বহু চেষ্টায় তাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে আনা সম্ভব হয়। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ভারতের অরক্ষিত কূপগুলো দ্রুত ঢেকে দেওয়া হবে। কিন্তু তারপর প্রায় দেড় দশক কেটে গেলেও পরিস্থিতির কোনো বদল হয়নি।