উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বিহারে মদ নিষিদ্ধ হয়েছিল। এরপর একাধিক ঘটনায় বিষমদ পান করে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের। ফের একই ধরনের ঘটনা সামনে এলো।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মতিহারি জেলার পাহাড়পুর, লক্ষ্মীপুর, হারসিদ্ধিসহ একাধিক গ্রামে বিষমদ পান করে অসুস্থ হয় অসংখ্য মানুষ। জায়গাগুলো বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শুক্রবার লক্ষ্মীপুরে বিষমদ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা সামনে আসে। এরপর ওই এলাকাসহ একাধিক গ্রাম থেকে মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা সামনে আসে। শনিবার পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। অসুস্থ ৪৮ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তুরকাউলিয়া গ্রামে। সেখানে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া হরসিদ্ধিকে তিনজন এবং পাহাড়পুরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
মৃতের আত্মীয়দের দাবি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাঠে চাষের কাজে গিয়েছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। কাজ শেষে অন্ধকার মাঠেই মদের আসর বসে। অনেক রাত পর্যন্ত চলে সেই আসর। সকাল হতেই একের পর এক ব্যক্তির অসুস্থতার খবর সামনে আসে। অধিকাংশের পেটে ব্যথা এবং বমি শুরু হয়েছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর একে একে মৃত্যু হয় ১৬ জনের।
এদিকে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এ ঘটনার পর বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে রয়েছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ পাঁচজন কর্মকর্তা। দলটি ইতিমধ্যে গ্রামগুলোতে পৌঁছেছে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে নিশানা করে ইতিমধ্যে তীর ছুড়তে শুরু করেছেন বিরোধীরা। ২০১৬ সালে বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তার পরও বিহারে বিষমদ খেয়ে বেশ কয়েকবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সরন জেলায় বিষমদে বহু মানুষের মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এর পরও যদি মানুষের টনক না নড়ে তাহলে আর কী করা যাবে? মানুষ মদ খাবে আর মরবে। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার মদ নিষিদ্ধ করলেও, মদ খাওয়া নিষিদ্ধ করতে পারেনি, তাই এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বিহারে মদ নিষিদ্ধ হলেও সে রাজ্যে তৈরি হচ্ছে কাঁচা মদ। নিষেধাজ্ঞার কারণে এর চাহিদা বেড়েছে। অনেক সময় নেশার দোহাই দিয়ে মানুষ নিজের জীবন নিয়ে খেলা করতেও বাদ যায় না। জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা বলছে, বিহারে প্রায় ১৫ শতাংশ লোক রয়েছে, যারা নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন মদ পান করে।
বিহারে মদ নিষিদ্ধ থাকায় মদের চাহিদা অনুযায়ী জোগান নেই, সঙ্গে বেআইনিভাবে যে মদ পাওয়া যায় তার দাম প্রচুর, তাই দাম কমাতে আসল মদের সঙ্গে মিথাইল অ্যালকোহল মেশানো হয়। তা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। মাত্রা একটু বেশি কম হয়ে গেলেই এটি শরীরের ওপর সাংঘাতিক প্রভাব ফেলে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এতে অনেকের মৃত্যুও হয়। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।