করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ডেলটা ধরন ভারতে বিপর্যয় ঘটিয়েছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়াই। করোনা মহামারির মধ্যে দেশটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়ে ৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনার পাশাপাশি ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণজনিত মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে আজ বুধবার বলা হয়েছে, ভারতে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩৭৪ জনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেক এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভিয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এই ছত্রাক দেখা যায়। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
এআইআইএমএস আরও জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ মস্তিষ্ক ও ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে—এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের এই ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা স্টেরয়েডের অপব্যবহার কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ১২ থেকে ১৮ দিন পরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়তে একমাত্র চিকিৎসা ছত্রাক–প্রতিরোধী ইনজেকশন।
বেঙ্গালুরুর চক্ষু চিকিৎসক রঘুরাজ হেগড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত বেশ কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করেছেন। তাঁর মতে, ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ও তাতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে। বিবিসিকে তিনি বলেন, সাধারণত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পরে রোগীর মৃত্যু হয়। ভারতের বর্তমান ব্যবস্থা এই সংখ্যা নিরূপণে যথার্থ নয়।