তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সমগ্ৰ কলকাতাবাসীর। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। বেসরকারি স্কুলে আবার সকাল সাতটা থেকে সারে দশটা পর্যন্ত ক্লাস চালু থাকছে।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা প্রচারে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার কেউ এই গরমে মেজাজ হারাচ্ছেন।
প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে বাঁচতে প্রচারের ফাঁকে ফাঁকে ডাবের পানি, আইসক্রিম, জুস, ঠান্ডা পানি খেতে দেখা যাচ্ছে প্রার্থীদের। কেউ আবার লবণ-চিনি পানি, গ্লুকোজ, ওআরএস-এর প্যাকেট সঙ্গে রাখছে। মাথা রাখতে হচ্ছে বড় টুপি, কেউ আবার গলায় গামছা নিয়ে, কেউবা ছাতা মাথায় দিয়ে প্রচার সারছেন। দুপুরের খাবারেও রাখা আছে খুব হালকা মসলা-বিহীন বা কম মসলাযুক্ত খাবার।
তীব্র কাঠফাটা গরমের কারণে প্রচারে বেরিয়ে কষ্টের কথা স্বীকার করে নিলেন ব্যারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তিনি জানান, আমার খুব খারাপ লাগছে যে এত তাপপ্রবাহের মধ্যে কর্মীদের নিয়ে আমাকে প্রচারণা করতে হচ্ছে। কিন্তু কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি অর্থাৎ রোদের তাপ বাড়ার আগেই সকাল-সকাল আমাদের প্রচারণাটা শেষ করে দেওয়া যায়। প্রচারণা শেষে সেচ মন্ত্রীর দুপুরের খাবারে থাকছে দুটো আটার রুটি আর চিকেন ভর্তা।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং জানান, গরমের কারণে ঘুমটা কম হচ্ছে, তাছাড়া অন্য কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে দলীয় কর্মীদের এই গরমে বের হতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সকালে হাল্কা খাবার খেয়ে প্রচারে বেরোচ্ছেন অর্জুন সিং। অনেক সময় প্রচার শেষে কোনো কর্মীর বাড়িতে হালকা খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের প্রচারে বের হতে হচ্ছেন বলে জানান অর্জুন সিং। হালকা খাবারে থাকে, আটার রুটি, ভাত ও ডাল।
দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সৌগত রায়কে প্রচারের ফাঁকেই ডাবের পানিতে চুমুক দিয়ে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে দেখা যায়। তীব্র গরমের জন্য সকালেই প্রচারণা শুরু করে রোদের তীব্রতা বাড়ার আগেই প্রচারণা শেষ করে নির্বাচনি কার্যালয়ে ফিরে বিশ্রাম নেওয়া। দুপুরে তার ডায়েটে থাকে মসলা-বিহীন বা কম মসলাযুক্ত খাবার, ভাত,ডাল,মাছ,সালাদ,টক দই।
গরম থেকে বাঁচতে তারকা ক্রিকেটার বহরমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইউসুফ পাঠান খাচ্ছে সাধারণ খাবার। সাধারণ বাঙালি খাবারই তার বেশি পছন্দ। গুজরাটি ক্রিকেটার হলেও এখন বর্তমানে আলুভাজা, ভাতসহ মাছ ও পাঁচ তরকারি সবজি থাকছে তার পাতে। পাশাপাশি গরম থেকে বাঁচতে পাতে থাকছে টক দই। ইউসুফ পাঠানের কথায় বাংলা ও বাঙালিয়ানার সঙ্গে আমার যোগ দীর্ঘ দিনের। আলু ভাজা ও ডাল আমার পছন্দ। কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলেছি অনেক দিন। বাঙালি খাবার আমার ভালই লাগে।
হুগলি কেন্দ্রের মুখোমুখি লড়াই করছেন দুই অভিনেত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী দিদি নাম্বার ওয়ানের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তীব্র গরমের জন্য সকালেই প্রচারণা শুরু করে দু’জনেই। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গরমের হাত থেকে বাঁচতে মাঝে মাঝেই আইসক্রিম খেতে দেখা যায়।
তবে লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রচারণার ফাঁকে শীতল পানির ওপর বেশি নির্ভরশীল। এই গরমে লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজেকে সুস্থ রাখতে তার পছন্দের খাবারের কথা তিনি নিজেই জানান। লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমি নিজে বেশি করে বাতাসা খাচ্ছি, ঠান্ডা পানি পান করছি। সবাইকে বলবো বেশি করে পানি পান করুন, পানির মধ্যে মুড়ি ভিজিয়ে খান। বিগত দিনে চারটি নির্বাচনে এই পদ্ধতিতে লড়াইয়ে ভালো থেকেছে।
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্ৰি সেলসিয়াসের ঘরে পৌঁছেছে। কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের স্পষ্ট বার্তা, তাপপ্রবাহের হাত থেকে এখনই নিস্তার পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।
বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর পঞ্চায়েত এলাকায় এক নির্বাচনী প্রচারণে গিয়ে মেজাজ হারান বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দীর রায়। উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করায় নিজের দলের কর্মীকেই ইডিয়ট বলেন শতাব্দী রায়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপও বাড়ে। তাই প্রচারণার সময় তালিকায় বদল করছেন প্রার্থীরা। সকাল ছয়টা থেকে বেরোচ্ছেন, কেউবা ৭টা থেকে তিন ঘণ্টার জন্য প্রচারণা সেরে ১০টার মধ্যেই বাড়িতে কিংবা দলীয় কার্যালয় ফিরে আসছেন। রোদের তাপ পড়তেই ফের বিকেল বেলায় প্রচারণায় বেরোচ্ছেন তারা।